Tuesday 7 July 2015

ছোটগল্প - কবি -স্পর্শের বাইরে ~


**কবি**
    -স্পর্শের বাইরে



(লেখাটি উত্সর্গ করলাম সেই সব কবি'দের,যাদের কবিতা কখনও মলাটবন্দি হয়নি,,হয়ত কখনও হবে না)

"আপনি এখনও বসে আছেন?"
ভদ্রলোক যঠেষ্ট বিরক্ত বোধ করলেন,এবং তা লুকানোর চেষ্টা করলেন। অনুভূতি লুকানো যায়না। বিরক্তি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টায় ভদ্রলোকের মুখ দেখাচ্ছে ছুঁচোর মত। আমি হাসিহাসি মুখে ভদ্রলোকের সামনে কি দাড়ালাম,তারপর হাত জোড় করে বললাম
"ভালো আছেন বিনোদন বাবু? শরীর কেমন?"
ভদ্রলোক এবার আক্ষরিক অর্থেই ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন এবং আবার আগের মতন তা লুকানোর চেষ্টা করে বললেন-
"স্পর্শবাবু,শুনুন একটা কথা বলি। আগে আপনি বসুন,..বসুন,তারপর বলছি।"
আমি বসলাম।
"আপনি একজন কবি মানুষ। কবিদের প্রত্যেকটি ভাষা-শব্দ হবে নিখুঁত। তাই না? নয়ত সাধারণ মানুষের শব্দচয়ন আর কবিদের মধ্যে পার্থক্য কি থাকল? কাল থেকে যেকোন হকারও কবিতা বলে জিনিস বিক্রি করতে শুরু করবে। তাই না?"
-" সে তো অবশ্যই।"
- "তাই আপনাকে আবারও বলছি,আমার নাম বিনোদন নয়,,বিনয়ন। বিনয়ন সামন্ত। বুঝতে পেরেছেন??"
- "হ্যাঁ। বড় ভালো নাম।"
-" ধন্যবাদ। এবার বলুন আমি আপনার জন্য কি করতে পারি?? যদি আবার সেই পুরনো অনুরোধ থাকে,তবে আমাকে মাফ করবেন।"
-" আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমি সেই পুরনো অনুরোধই আপনার কাছে আবার করতে এসেছি। যদি আমার কবিতাগুচ্ছ মলাটবদ্ধ করেন।"
-" সম্ভব নয় স্পর্শবাবু"।
-"কেন সম্ভব নয়? আমার কবিতাগুলি কি আপনার পছন্দ নয়? সত্যিকারের বলুন তো!"
-"অবশ্যই পছন্দ"
-"তবে?"
-"অনেক ব্যাপার থাকে স্পর্শবাবু। আপনি তা বুঝবেন না। আর আমি আপনাকে তা বোঝাতেও চাই না। সেটাই আপনার এবং আমার জন্য মঙ্গল।"
-"সামন্তবাবু,আপনি নিজেও জানেন আমি একজন সম্ভাবনাময় কবি। শুধু একটা স্কোপ চাই।"
-" জানি ভাই। আপনি অবশ্যই একজন সম্ভাবনাময় কবি। কিন্তু দু:খের বিষয় আমি আপনাকে স্কোপ দিতে পারব না। পশ্চিমবঙ্গের রাস্তাঘাটে এরকম হাজারো সম্ভাবনাময় কবিদের খুঁজে পাবেন। ওত কষ্ট করতে হবে না। বিভিন্ন সোশাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতেই যান না,লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীতের স্টাটাস ঘেঁটে দেখুন,লক্ষ লক্ষ কবিতা খুঁজে পাবেন। তাদের সবাইকে স্কোপ দিতে গেলে আমরা আর ব্যবসা চালাতে পারব না। আসলে তো ব্যবসাই করি তাই না! আমাদেরও বউ-ছেলেমেয়েদের খাওয়াতে হয়।"
-" সামন্তবাবু আপনি জানেন যে আমার পাঠক আছে,যারা আমার কবিতা পড়ে। আপনারা দু-একটা চিঠিও পেয়েছেন। আপনাদের বিভিন্ন পুজো সংখ্যাগুলোর একটা-দুটোতে আমার কবিতা বের হয়। বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ঘাটলেও আমার কবিতা পাবেন।"
-" আরে ধুর! আপনি এটাকে উনবিংশ শতাব্দি ভেবেছেন নাকি? লিটল ম্যাগাজিন এখন লক্ষ লক্ষ পাবেন। সেগুলোর আর পাঠক তৈরির ক্ষমতা নেই। সরি,একটু ভুল বললাম,,কবিতার পাঠক তৈরির ক্ষমতা নেই। এখন সবাই উপন্যাস খোঁজে ভাই। কোন বার্ষিকীতে কোন লেখক,কোন উপন্যাস লেখেছেন এখনকার পাঠক তা বলে দেবে। পূজাবার্ষিকীগুলো বিক্রিই হয় উপন্যাসের জন্যে। কবিতা পড়তে কজন পাঠক পত্রিকা কেনে???? 
এক কাজ করুন স্পর্শবাবু। একটা উপন্যাস লিখে ফেলুন। ছাপাবার চেষ্টা করব। উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে আপনাকে অনেক মানুষ চিনবে। তারপর কবিতা-তবিটা যা লেখার লিখবেন।"
-"সামন্তবাবু,আমি একজন কবি। আমার সাহিত্যপ্রতিভার বিকাশ ঘটবে উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে? এটা ভাবতেও পারি না!! তার থেকে একটা কাজ করুন না। আপনাদের পত্রিকা তো পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে নামকরা পত্রিকা। ওখানে আমার কিছু কবিতা নিয়ে একটা ক্রোড়পত্র বার করুন না। সাধারন মানুষের (পাঠকের) আমাকে চেনার এর থেকে ভালো উপায় আর কি থাকতে পারে!"
ভদ্রলোক এবার উচ্চস্বরে হাসলেন।
সাধারণত এধরনের হাসি মধ্যেরাতে হায়েনা'দের গলা থেকে শুনতে পাওয়া যায়। কি আশ্চর্য! !! ভদ্রলোককে এখন দেখাচ্ছেও হায়েনার মত। কিচ্ছুক্ষণ আগে ছুঁচোর মত লাগছিল না!
-"স্পর্শবাবু,এর মানে আপনি বলতে চাইছেন আমি আমাদের বৃহত্তম পত্রিকায় দেড়-পেজ জুড়ে আপনার কবিতার ক্রোড়পত্র বের করব... তাই তো?"
-"হুম্"
-"দেড় পেজ এর দাম আপনি জানেন?? ওই জায়গায় দুটো বিজ্ঞাপন দিলেই ৮ লাখ উঠে আসবে। আপনি কখনও দেখেছেন আমাদের পত্রিকায় দির্ঘপেজ জুড়ে আমরা কোনো অনামি লেখকের ক্রোড়পত্র বার করেছি?? "
- "আপনি আমার ক্রোড়পত্র ছাপাবার পরেই আমার কবিতা নিয়ে একটা বই বার করে ফেলুন না। রয়ালিটি লাগবে না। তাতেই টাকা উঠে আসবে।"
ভদ্রলোক আবারও হাসতে শুরু করলেন।
এবার আমি বিরক্ত লুকানোর চেষ্টা করলাম। কি এমন কথা বললাম যাতে এত হাসি পায়! আচ্ছা আমার মুখ কি এখন ছুঁচোর মত দেখাচ্ছে?
-" স্পর্শবাবু,আপনার ধারনা নেই আপনি কি বলেছেন। শুনুন,আমরা একটা উপন্যাস পূজাবার্ষিকীতে বের করি। সেই উপন্যাসএর টানে পাঠকরা পত্রিকা কেনে। তারপর আবার সেই উপন্যাসটাই মলাটে বন্দি করে দু-তিনশ টাকায় বাজারে ছাড়ি। আবারও তা বিক্রি হয়ে যায়। কেউ পত্রিকায় না পড়ার কারনে কেনে,,কেউ সংগ্রহে রাখার জন্যে কেনে। কবিতায় লাভ নাই ভাই। পূজাবার্ষিকীগুলোতে একটা-দুটোর বেশি কবিতা দেওয়া যায় না। আর একটা-দুটো কবিতা দুশো টাকায় বিক্রি হয় না স্পর্শবাবু। তাও ধরুন আমি আপনার একটা বই বাজারে বের করলাম। আপনি খুব ভালো লেখেন আমি জানি। হয়ত কিছু পাঠক কিনলো। তাদের ভালো লাগল। দু-একজন পাঠক আপনার নাম জানলো। নাম জানার সাথে সাথেই দেখবেন দু-একদিনের মধ্যে আপনার বই এর একটা পিডিএফ(PDF) ভার্সন বেড়িয়ে গেছে। টাকা খরচ করে কে কবিতার বই কিনতে যাবে? একশোর মধ্যে কিনবে একজন। হাজারে দশজন। তাদের ওই বই কেনায় আমার তো পেট চলবে না। আপনি ফেমাস হলেও আমার পেট চলবে না। আপনার নাম ছড়াবে পিডিএফ (PDF) এর মাধ্যমে। আপনি ফেমাস হবেন। আমরা প্রকাশকরা ডুবব। একটা উপন্যাস লোকে ধৈর্য ধরে ইবুকে পড়বে না। সবাই তা পড়তেও পারে না। কিনে নেবে। কিন্তু একটা কবিতা পিডিএফ এ পড়তে কোনো বাঁধা নেই। বুঁঝছেন???"
-"এই ইবুক-পিডিএফ এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে আমরা কি এক আছাড় মেরে রাস্তায় এনে ফেলছি না সামন্তবাবু?"
-"সেটা আমাকে বলছেন কেন? পাঠকদের বলুন। এজন্যই প্রতিবছর ডজনে-ডজনে লেখক জন্মাচ্ছে। কবি কটা জন্মায়? এক কাজ করুর স্পর্শবাবু,,পিডিএফ নিয়ে একটা কবিতা লিখে ফেলুন। সামনের সংখ্যায় ছাপার চেষ্টা করব। হা হা হা।
স্পর্শবাবু এখনতো উঠতে হয়..একটু কাজ আছে। আপনি চা খাবেন??"
-"না"
-"খান এক কাপ। দিতে বলি?"
-"না থাক।"
প্রকাশনা থেকে বাইরে বেড়িয়ে আসলাম।
আজ আকাশ মেঘলা,বৃষ্টি হব হব করেও হচ্ছে না। আমি এখন পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আছি। প্রত্যেক রোববার এটাই আমার একমাত্র রুটিন। বিভিন্ন প্রকাশনায় হাঁটাহাঁটি করা। প্রায় পাচঁ বছর ধরে করে আসছি। আগে সপ্তাহে তিন-চারদিন এই রুটিন ছিল,একটা সরকারি চাকরি পাবার পর রোববার ছাড়া আর সময় হয় না।
রোববার দিনটায় সারাদিন আমি কিছু খাই না। খালি পেটে নাকি খুব ভালো কবিতা আসে। বহুবছর আগে 'একজন' একথা বলত। এখনো চোখের সামনে ভাসে সেই দিনগুলি। আমি পড়ার টেবিলে একমনে বসে কবিতা লিখতাম। 'ও' জানালা দিয়ে এসে বিরক্ত করত।
-"এই যে কবিসাব, কি করছেন?"
-"তিথি এখন লিখছি,বিরক্ত কর না।"
-"কি লিখছেন একটু বলুন তো। নতুন কি কবিতা,কবিতার নাম কি?"
- "নাম বললে তুমি বুঝবে?"
-"কবিতাই বুঝিনা,আর নাম! হা হা হা...."
বলেই 'ও' চুরি নাড়িয়ে হাসত। চুরির সেই রিনঝিন রিনঝিন শব্দে আমার মাথা ঝিমঝিম করে উঠত।
-"কবিতার নাম হল 'তিথি'। "
'ও' লজ্জা মাখা গলায় বলত..
"ইস! অন্য কোনো নাম পেলেন না? আপনি খুব অসভ্য"।
-"অসভ্যের কি দেখলে,আমার পরের কবিতার নামও ঠিক করা হয়ে গেছে। কি নাম জান?"
-"কি??"
-"আদর।"
-"ইসসস দুষ্টু... আপনার সাথে আর কথা নেই।"
-"আপনি আপনি করছো কেন??"
-" নয়ত আর কি বলব? ওত বড় দাড়ি রেখেছেন। আপনাকে দেখাচ্ছে সাধুপুরুষের মত।"
-"কবিরা এরকম দাড়িই রাখে। রবি ঠাকুরের দাড়ি দেখনি?"
-"উনি কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে দাড়ি রাখতেন। তরুন বয়সে ওনার খুব সুন্দর গোঁফ ছিল। তোমার তো মনে হয় গোঁফই ওঠে নি। হাহাহা...."
বলতে বলতেই ওর চুরি আবার বেজে উঠত। মন স্পর্শ করে যেত সে শব্দ।...
পার্কে বসে মেঘলাদিনে এসব ভাবছি। ঘোর কাঁটল এক বাদামওয়ালার ডাকে-
'বাবু,বাদাম লিবেন?'
-"টাকা নেই ভাই। আজকের দিনে আমি টাকা নিয়ে বেড়াই না। আমাকে বিভিন্ন প্রকাশনায় ভিক্ষা করে বেড়াতে হয়। তবে তুমি যদি একঠোঙা বাদাম দাও,মূল্যবান একটা জিনিস পাবে।"
-"কি?"
-"কবিতা। আমার লেখা নতুন একটা কবিতা"।
বাদামওয়ালা আমাকে অবাক করে একঠোঙা বাদাম দিয়ে বলল
-'কন। একখান কবিতা কন। শুনি।'
আমি বলতে শুরু করলাম....
"খুব সম্ভবতঃ একজন প্রেমিক ছিল সে, 
কাগজের ভাঁজে গোপনে জমাতো জোছনার জল, তারার সুর, ক্ষয়ে পড়া পালকের মত দীর্ঘশ্বাস কিছু।..
নৃশংস ছাই হয়ে ঝরে যেতে যেতে একদিন জেনে গেলো-
এই শহরে নির্ঘুম সোডিয়াম লাইটেরা নিশ্চুপ থেকে সারারাত শুধু প্রায়শ্চিত্তের কথা ভাবে।
মাছরাঙার নীল ডানায় প্রতীক্ষায় না থেকে একদিন-
বহুবার করে বাঁচার সাধ হল তাঁর-কবিতার।
ধ্বংসস্তূপের মাঝে নতুন পৃষ্টা, ছাই ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা ঝলমলে বাজ ফিনিক্স। 
মাছির চোখের দ্যুতি নিয়ে পৃথিবীকে দেখছিল, নতুনভাবে, হাজার রাত্রির রূপকথা- যেন গুঁড়িয়ে যাওয়া শত টুকরো আয়নার ভেতর শত শত কবিতা'কে।
যা কোনোদিন কোনো মলাটে ঠাই পাবে না।........."
হঠাৎ কবিতা থামিয়ে আমি বাদামওয়ালাকে ত্বারস্বরে জিজ্ঞেস করলাম
-"চুরির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন?? রিনঝিন রিনঝিন চুড়ির আওয়াজ??"
তিনি গভীর বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।।

Monday 6 July 2015

ছোটগল্প ~ ঋজু পাল

শেষ থেকে শুরু 
ঋজু পাল :~

    সকালে বাড়ি ফিরলাম , শরীর টা বড্ড দুর্বল এখনো । তিন দিন হসপিটাল এর বিছানাতে কাটানোর পর আজ নিজের চেনা পরিবেশে ফিরতে খুব ভালো লাগছে । বাড়ির পরিবেশ এখনো থমথমে । বউদি পর্যন্ত কেঁদে কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছে । বাবা সেই যে ট্যাক্সি থেকে আমায় নামিয়ে ঘরে নিয়ে এল , তারপর থেকে আর দেখতে পাচ্ছি না । মা বোধহয় ঠাকুর ঘরে , যমের মুখ থেকে ছেলে ফিরে এসেছে ,ঠাকুরের প্রাপ্য ধন্যবাদ টুকু দিতে গেছে ! আর আমি? খোলা জানলা দিয়ে চারপাশের আলো ঝলমলে আকাশ তাকে দেখছি, সত্যি ই কি কোন দরকার ছিল ওরকম একটা পদক্ষেপ নেওয়ার ? জানি না। 
হটাত আমার সাত বছরের পুচকু ভাইপো এসে বলে ফেলল ; কাকু তুমি আর যাবে না তো আমায় ছেড়ে ? তাহলে আমায় ঘুরতে কে নিয়ে যাবে ? বাবা র মত তুমিও স্টার হয়ে.........।
ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম , না সোনা ,কোথাও যাবো না আমি । প্রমিস করলাম।
নাহ , এত ভালবাসা কে অগ্রাহ্য করার মত দুঃসাহস আমার নেই । নতুন জীবন শুরু করতে আমায় হবেই , পুরনো ডায়েরি গুলো কি করবো , ফেলে দেব ? স্মৃতি আঁকড়ে বসে থেকে কোন লাভ নেই ।
এই তো সেদিনের কথা , TCS এর ক্যাম্পাস প্লেসমেন্ট চলছে । দুটো ধাপ টপকে দুরু দুরু বক্ষে অপেক্ষা করছি শেষ ধাপের জন্য। মনে হচ্ছে পারবো না ,হবে না। মোবাইল টা বন্ধ করতে গিয়ে একটা মেসেজ চোখে পড়ল , All the best dear ! u have 2 do it smile emoticon 
মুহূর্তেই হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম । তারপর ? ...............
----হ্যালো , রাহুল দা , selected !!!!!!!!!! 
---জানতাম এটাই হবে । Heartiest congratulations !!!! যা বাড়ি যা , রাতে ফোন করছি ।
এই হল রাহুল দা , আনন্দে টগবগ করলেও বাইরে থেকে বোঝা যায় না । দেখতে দেখতে দুবছর হয়ে গেল ,we r in a relationship ! আমাদের আলাপ Rainbow Pride Fest walk এ ।নিছক বন্ধুত্ব , তারপর একটু একটু ভাল লাগা , অতঃপর ভালবাসা । আজ চেন্নাই তে থাকলেও প্রতিদিন যোগাযোগ রাখা , কথা বলা কোনটাতেই খামতি নেই ।
মা খুব রাগারাগি করেছিল, বউদি ও , কলকাতা ছেড়ে চেন্নাই কেন যাচ্ছি । মা কে কোনমতে বুঝিয়েছিলাম , চাপ এর কি আছে , রাহুল দা আছে তো , এক অফিস , এক এপার্টমেন্ট , কোন অসুবিধা হবে না।
বাড়িতে সবাই জানে ,রাহুল দা আমার খুব প্রিয় বন্ধু , কিন্তু ওই টুকুই । তার বেশি কিছু বলার মত সৎসাহস আমার ছিল না ।
তারপর আর কি , চেন্নাই তে পা দেওয়া , একে নতুন জীবন , তারপর নিজের ভালবাসার মানুষের সঙ্গে একসাথে থাকতে পারার আনন্দ যে কতটা হতে পারে , সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এক সাথে অফিস যাওয়া, ফেরার সময় ঘুরে ফিরে ফ্ল্যাটে আসা , রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা , আর অনেক টা ভালবাসা !
সব তো ঠিকই চলছিলো , তবু কেন এমন হল ... রাহুল দা র বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য জোর করা , অপ্রত্যাশিত ভাবে ওর রাজি হওয়া, নিজের একটা আলাদা এপার্টমেন্ট খুঁজে নিতে অনুরোধ করা , আমার কান্নায় ভেঙে পরা ..................সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল !
কটা ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলাম ঠিক মনে নেই , তবে এটুকু খেয়াল আছে বাড়ির আর অফিস এর অনেককেই হসপিটাল এ দেখতে পেলেও , একজন কে পাই নি । আমার অভস্ত্য চোখ শুধু খুঁজে বেরিয়েছে তাকে , একসময় ক্লান্ত হয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে ।
বাবু , তোর একটা চিঠি এসেছে , এদিকে আসতে পারবি ? বউদি র গলা শুনে চমকে উঠলাম । নিজের অজান্তেই কখন অতীতে ফিরে গেছিলাম।
সই করে চিঠি টা নিয়ে দেখি , Tech Mahindra র অফার লেটার ! কবে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম আর আজ এল ,পোস্টিং কোলকাতা তেই ।
কার চিঠি রে ? মা এগিয়ে এল ।
মা , আমি TCS ছেড়ে ভুল করি নি , আমি রাস্তা খুঁজে পেয়েছি । এবার নতুন করে সব শুরু করব ,শুধু তোমাদের জন্য !
হার সৌরভ কোনদিন মানে নি , মানবেও না।

Wednesday 1 July 2015

পুস্তক পর্যালোচনা ~প্রবুদ্ধ দাস

প্রবুদ্ধ দাসের পুস্তক পর্যালোচনা ~

বই : ঘুরি বেড়াই ছবি আঁকি
অঙ্কন ~ কথন : দেবাশীষ দেব
প্রকাশক : ঋতি প্রকাশন 
দাম : ৩০০ টাকা


যখন এক ভ্রমণপিপাসু মানুষ তাঁর নিজ ভ্রমণের আখ্যান শব্দের বদলে তুলির টানে বোঝান সেই অভিনব প্রয়াসের ফলস্বরূপ এই বই। শিল্পী দেবাশীষ ছোটবেলা থেকেই ঘুরতে ভালোবাসেন । এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই কলমের বদলে তুলি হয়ে ওঠে তাঁর সঙ্গী। যে দৃশ্য তাঁর মন কাড়ে সেই দৃশ্যই রঙ আর তুলির টানে জীবন্ত হয়ে ওঠে আর আমার মতো ভ্রমণপিপাসু মানুষদের এক নস্টালজিয়াতে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। অঙ্কন শিল্প চিরকালই আমায় টানে যদিও নিজে আঁকতে তেমন পারিনা কিন্তু অনেক সময়ই আর্ট গ্যালারি হয়ে ওঠে আমার বন্ধু বইয়ের পাশে।
এই বই যারা বই ভালোবাসেন ,যারা ঘুরতে যাওয়ার স্মৃতি রোমন্থন করতে ভালোবাসেন এবং যারা আঁকেন তাঁরা নিশ্চয় সংগ্রহ করুন । ঠকবেন না ।


পুস্তক পর্যালোচনা ~ নিবেদিতা রায় চৌধুরী


নিবেদিতা রায় চৌধুরীর পুস্তক পর্যালোচনা ~

নামঃ উজান-যাত্রা
লেখিকাঃ বাণী বসু
প্রকাশকঃ আনন্দ প্রকাশনী
মূল্যঃ ১৫০/-

নামকরণ দ্বারাই এই বইটির মূল বিষয় ঘোষিত হয়েছে। লেখিকা তাঁর বহুল সমাদৃত লেখনীর মাধ্যমে এক শিকড়ে ফিরে যাওয়ার যাত্রার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। গুজরাটি কটন কিং নরেন্দ্রজীর একমাত্র কন্যা কস্তুরীর জন্য সেই যাত্রা তাঁর মাকে খোঁজার, আবার উচ্চশিক্ষিত আদিবাসী যুবক কাজলের জন্য সেই যাত্রা তার আদি দেশকে নতুন করে আবিষ্কার করার। আর এই যাত্রাপথে তারা সঙ্গী হিসাবে পেয়েছে অসামান্যা রূপসী আর্যকন্যা শিখরিণী এবং সাধারণ বাঙালী মেয়ে মিলিকে। এই যাত্রা শুধু স্থান থেকে স্থানান্তরে নয়, ধারণা থেকে জ্ঞান ও জানা থেকে আবিষ্কারেও বটে। আমরা এই সমগ্র যাত্রাপথের বর্ণনা বিভিন্ন ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে পেয়েছি। কিন্তু লেখিকার সব থেকে বড়ো কৃতিত্ব আমাদের সঙ্গে একটি বিশেষ প্রজন্মের পরিচয় করানো, যাঁদের সম্পর্কে বর্তমান ভার্চুয়াল প্রজন্ম সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তাঁরা একদিন অনেক স্বপ্ন চোখে নিয়ে এমন একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন যা গান্ধীজীর আদর্শ রামরাজ্য হবে। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের রাজনৈতিক জটিলতা এবং তথাকথিত নেতৃবৃন্দের স্বার্থসিদ্ধির কূট প্রবণতা দেখে তাঁরা অপরিসীম হতাশার সম্মুখীন হন। তাঁরা কেউ নিবেদিতার মতো একাকীত্বের জীবন বেছে নেন, কেউ রমার মত শিশুদের নিয়ে সময় কাটান, আবার কেউ কল্যাণীর মতো সত্যিকারের মানুষ গড়ার প্রচেষ্টার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। এই মানুষদের মধ্যে কিছুজনের নাম আমরা ইতিহাস বইতে অথবা সাধারণ জ্ঞানের বইতে "ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী" অধ্যায়ে পড়ি। কিন্তু তাঁদের স্বপ্ন এবং স্বাধীনোত্তর ভারতে তাঁদের disillusionment-এর কাহিনী লেখিকা সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। তবে সমাপ্তিটা যেন একটু দ্রুতই এসেছে, যেখানে আরো বিস্তারের সুযোগ ছিল।
এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলা যায় এই বইটি। পরতে পরতে জড়িয়ে আছে উত্তেজনা এবং গতি। আপনারা পড়ুন, পড়ে জানান আপনাদের মত। প্রত্যেকের শিকড়ে ফেরার যাত্রার বীজ লুকিয়ে আছে এই কাহিনীতে।

Monday 29 June 2015

গৌর-চন্দ্রিকা ~ সায়ন মুখার্জ্জী

সায়ন মুখার্জ্জীর চোখে বৈষ্ণব-পদাবলী ~



ভূমিকা-- এটি বৈষ্ণব-পদাবলীর প্রথম পর্যায়, গৌর-চন্দ্রিকা পর্যায়ের। বিভিন্ন পদকর্তা-গণ এ-বিষয়ে এতো মহান মহান পদ লিখেছেন যে এটা পড়ে ক্ষমা-ঘেন্না করে দেবেন। এই ছড়ার সঙ্গে পদাবলীর দূর-দূর থেকে কোন সম্পর্ক নেই...

প্রেক্ষাপট-- দীক্ষা নিয়ে নদের-নিমাই হয়েছেন, মহাপ্রভু-শ্রীচৈতন্য দেব। তাঁর কৃষ্ণ-প্রেমে আকুল নদীয়া তথা গোটা বাংলা-উড়িষ্যা-বাসী।
তিনি যে শুধু-মাত্র বৈষ্ণব-ধর্ম প্রচারক নন, তিনি এক-জন সমাজ-সংস্কারক-ও বটে। সমাজে যেখানে যা অন্যায় ঘটে, তার-ই প্রতিবাদে তিনি গর্জে ওঠেন। সমাজের মাথারা তাই তাঁর বিরুদ্ধে এক হয়ে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন।

সেই সময় নদীয়ার কোতোয়ালের দুই-ছেলে "জগ্ননাথ" ও "মাধব", 'জগাই','মাধাই' নামে কু-খ্যাত ছিলেন। কর আদায়ের জন্য হেন নীচ কাজ নেই যে তারা করত না। তাদের মতো পতিত-দের উদ্ধার করার জন্য, মহাপ্রভু অনেক চেষ্টা করেন ও অকাতরে প্রেম বিলান, কিন্তু কিছুতেই তারা পাপের পথ ছেড়ে দিতে রাজী নয়।

তখন প্রভু-নিত্যানন্দ, যিনি মহাপ্রভুর অন্যতম শিষ্য ও বন্ধু এর জন্য এগিয়ে এলেন। পথের ধারে মাংস ও মদের পাত্র নিয়ে বসে থাকা ২-ভাইয়ের সামনে তিনি কীর্তন করতে থাকেন। তাদের ২-জনকেও কৃষ্ণ-নাম করার জন্য বার-বার অনুরোধ করতে থাকেন। বিরক্ত 'মেধো' তখন মদের মাটির পাত্র ছুঁড়ে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেন। তখন প্রভু নিত্যানন্দ বলেন, " মেরেছিস কলসির কানা, তা বলে কি প্রেম দেব না !'

ও-দিকে নিতাই-প্রভুর আহত হওয়ার খবরে ক্রোধে অধীর মহাপ্রভু ছুটে আসেন তাঁদের সামনে। তিনি এই-দুই-অসুর-কে হত্যার জন্য আকাশের দিকে আঙুল করে তাঁর সুদর্শন-চক্র কে আহ্বান করেন। তাঁর মাথার পিছনে ১-টি দিব্য-চক্র সৃষ্টি হয়। ও-দিকে নিতাই-প্রভু, নিমাই-মহাপ্রভু-র পা ধরে বারংবার ওদের কৃত-কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। এই ঘটনায় কিছুটা বিরক্ত ও ততোধিক বিস্মিত মহাপ্রভু।

এর পরেই এই কাব্যের উপস্থাপনা। বৈষ্ণব-শাস্ত্র অনুসারে নিমাই-মহাপ্রভু শ্রী-কৃষ্ণের, নিতাই মহাপ্রভু শ্রী-বলরামের অবতার।
পদ্যের ১-ম অংশ-টি মহাপ্রভুর, ২-য় অংশ-টি নিমাই প্রভুর, ৩-য় অংশ-টি অভাগা-কবির বক্তব্য।

১।
কেন ? ও-দের ব্যাথাতে তুমি, হও-গো ব্যাকুল--
ওরা কি ভাঙেনি ? ও-গো তোমার-ই দু-কূল --
আজি, এ-ঝড়ে যদি, ও-রাহু-কেতু মরে--
তাতেই লুটিবে তুমি--দুই-জোড় কড়ে---
মাথা নত করে !!!
কোথা জমা রাখো, তুমি এত প্রেম-বিন্দু ?
কেনো সে যায় না বয়ে, হে ক্ষমা-সিন্ধু !!!
আঘাতে ওদের তুমি, হও না কি জীর্ণ ?
কভু, হও কি বিদীর্ণ ???
তারে এত দ্রুত, তুমি কর, কেমনে ক্ষমা ?
মনেতে যাদের, ও, কালকূট জমা।
কতই-সেধেছি, আমি ওরে, ভজনার-ই তরে,
কইতে বলেছি, কৃষ্ণ-নাম, পরিত্রাণ তরে।
শোনে-নি-তো, এরা-ও বন্ধু, যেমন, শোনে-নি-কো ওরা--
তাই তো ত্রেতা-যুগে রাবণ মরে--দ্বাপর কংস হারা !!!
তাই আমি ডাকি, দিব্য-চক্র, করতে ওদের, সর্বনাশ--
এ-ধরিত্রী, ঠাণ্ডা হবে, হলে পড়ে, ওদের মুণ্ড-নাশ।।।

২।
আপনি প্রভু, আপনি পিতা--
আপনি হলেন, রাজার-রাজা--
শাস্তি ওদের দিতেই পারেন, 
পেতেই পারে, ও-রা সাজা।
কিন্তু প্রভু, এ-যে ঘোর-কলি--
যদি, অভয় দেন, তবে ২-টো কথা বলি--
এই যুগে-তে, সবার মনেই, শয়তানের-ই-বাস--
সবার ঘাড়েই সবাই ফেলে, বিষাক্ত-নিশ্বাস--
কয়জন-কে দণ্ড দেবেন ? ক-জনা পাবে শাস্তি ?
ভয়ে-তে লোকে শ্রদ্ধা করবে, প্রভু-প্রেমের ঘরে নাস্তি--
তাই তো প্রভু, প্রেম বিলাই-ছি--
ও-কলস আঘাত, মাথায় ল-য়েছি-
প্রভু, ও-কলস-ও, কভু, মাটির ছিলো--
কুমোর চাকেতে-লয়ে, খুব খেলে-ছিলো-
কিন্তু, ও-মাটি-ই যেই, শক্ত হল--
ওর ধর্ম-বর্ণ, বদলে গেলো।
প্রভু, প্রেম-লীলা ঠিক-তেমনি বট-ই--
শক্ত-পাষাণ-ও-হয়, গঙ্গা-মাটি ।।।

৩।
ও শ্রী-রূপ দেখিয়া ও শুনিয়া বিবিধ--
ডুকরে কেঁদে ওঠে, দস্যু-জগা ও মেধো-
ষাষ্ঠাঙ্গে শুয়ে পড়ে, প্রভু পাদ-পদ্ম, চুমি--
ত'-গো অশ্রুতে, শীতল হয়, তপ্ত-বঙ্গ-ভুমি--
" মোদের মতো পতিত, প্রভু, পাবে কি কভু দীক্ষা--
অসাধ্য-ও, করব সাধন, পেলে প্রভুর শিক্ষা।"
এতেক দেখে, জল এসে যায়, দুই-প্রভুর-ই চক্ষে--
দুই-পাপী-কেই, জড়িয়ে ধরেন, নিজের নিজের বক্ষে।
জনতা দেন, হর্ষ-ধ্বনি, সকলে নাচেন দু-বাহু-তুলি--
দুখী-মনে-তে ভাবেন কবি --
হায় ! কেন সে-যুগে, না পাঠালেন ভবী ।।

প্রবন্ধ : কবি সুকান্ত ও বর্তমান সময় ~ সুরঞ্জন মণ্ডল


সুরঞ্জন মণ্ডলের চোখে কবি সুকান্ত ও বর্তমান সময় :~

.
সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন বাংলা সাহিত্যে মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী একজন কবি। মার্কসবাদ কথার অর্থ হল সাম্যবাদ। মালিক বা বুর্জোয়া শ্রেনীর সাথে শোষিত, নিপীড়িত শ্রমিক শ্রেণীকে একসারিতে বসানোর মতবাদ হল সাম্যবাদ।
.
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯২৬ সালের ১৫ই আগস্ট। তিনি তার সময়কালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির প্রভাব স্বচক্ষে দেখেছেন আর হিংসার বিরুদ্ধে তার কলম গর্জে উঠেছে বার বার। প্রতিবাদী অগ্নিপিণ্ডের মত আছড়ে পড়েছে একের পর এক প্রতিবাদী কবিতা। প্রার্থী, হে মহাজীবন, একটি মোরগের কাহিনী, দুরাশার মৃত্যু, ছাড়পত্র প্রভিতি লেখনিতে তার ছাপ আমরা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাই।
.
বুর্জোয়া শ্রেণী তখন যেমন ছিল এখনও তেমন ভাবেই বিদ্যমান। রাজনৈতিক দলের মতো তাদেরও রঙ বদলেছে মাত্র। আজ ২০১৫ সালে পঁচে যাওয়া এক সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা কি তার গন্ধ পাইনা? নাকি প্রতিবাদের ভাষা আমরা একটু একটু করে ভুলতে বসেছি? নাকি আধুনিকতার ঠেলায় বড় বড় ফ্ল্যাট বাড়ির আড়ালে জঞ্জালের স্তুপের মত অন্ধকার বস্তি গুলোকে আর নজরে পরে না? কবি সুকান্ত হয়ত গন্ধটা পেয়েছিলেন। আর ক্রমশ ঘনিভুত হতে থাকা অন্ধকার তার নজরে পড়েছিল। সেই জন্যই হয়ত একফালি আলোর খোঁজ করছিলেন। নইলে কেন বলবেন-
.
হে সুর্য!
তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও,
আর উত্তাপ দিও,
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
.
হে সূর্য
তুমি আমাদের উত্তাপ দিও
শুনেছি, তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড,
তোমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে
একদিন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে
পরিণত হব!
তারপর সেই উত্তাপে যখন পুড়বে আমাদের জড়তা,
তখন হয়তো গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারবো
রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।
আজ কিন্তু আমরা তোমার অকৃপণ উত্তাপের প্রার্থী।।
.
আমরা ক্রমশ স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাচ্ছি। অথবা স্বার্থান্বেষী হয়ে নিজের স্বপ্ন নিয়ে এতটাই মজগুল হয়ে পড়েছি যে ভুলে যাচ্ছি ছেড়া কাঁথায় শুয়েও স্বপ্ন দেখা যায়। সুকান্ত কিন্তু অন্য স্বপ্ন দেখতেন। শোষণ বিহীন এক নতুন বিশ্বের স্বপ্ন। এক প্রতিবাদী জনতার বিশ্ব। যেখানে একটা শিশু জন্ম মুহুর্ত থেকে প্রতিবাদ জানাবে-
.
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা তেতাল্লিশের মম্বন্তরের রেশ এখন আর নেই। এখন যা রেয়েছে তা চোখে দেখা যায় না। আমার বোনের ছিড়ে খাওয়া লাশ যেদিন এঁদো গলিতে পড়ে থাকবে সেদিন সমস্যা নজরে পড়বে। নইলে প্রতিদিন সকালে গরম চায়ের সাথে দৈনিক সংবাদ পত্রের পাতা উল্টাব আর খুন, ধর্ষণ আর শাসক দলের বেফাঁস মন্তব্য আয়েশ করে গিলব।
.
আজকের দিনে প্রতিবাদ করতে সেখাটা ভীষণ ভাবে দরকার। দরকার একজন কবি সুকান্তের। দরকার একটা গর্জে উঠা প্রতিবাদী কলমের। আর কবিতার স্নিগ্ধতা নয়, চাই কঠিন কঠোর গদ্য।
.
আমি রাজনীতি বুঝিনা, বুঝতে চাইও না। তবে যখন এক থালা ভাতের জন্য আমার পেট খিদেতে চোঁচোঁ করে, তখন তার যন্ত্রণা ভীষণ ভাবে অনুভব করি। ওই অট্টালিকা নয়, এক থালা ভাত আর একটু সম্মানের সন্ধান করি প্রতিনিয়ত। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর দুর্গাপুজোর ধুমধাম করে ভোট হয়। আমরা সেজেগুজে ভোট দিতে যাই। শাসক দলের রঙ বদলায়। কিন্তু আমি আমার সম্মানের সন্ধান পাইনা। “গরীবের সম্মান” কথাটিই এখন সোনার পাথরবাটি।
.
আমার সম্পদ বলতে ভাঙাচোরা এই শরীর। আর গায়ের রং? লাল নয়, গেরুয়া নয়, সবুজও নয়; সেরফ রোদে পুড়ে কালো। কালো রঙের কোন ব্র্যান্ড ভ্যালু নেই। তাই আমার গুরুত্ব কেউ দেয় না। তবুও আমি কালোকেই ভালোবাসি।
.
আমার পেটে এখন এক শতাব্দীর খিদে। পুর্নিমার চাঁদ ঝলসানো রুটি ছাড়া কিছু নয়। না, আমি রঙ বদলাতে রাজি নই। কেউকি আমায় একটুকরো রুটি এনে দিতে পারো?

Friday 26 June 2015

পুস্তক পর্যালোচনা ~ শেষের কবিতা (বিপ্লব বেসরা)

শেষের কবিতার (বিপ্লব বেসরা) পুস্তক পর্যালোচনা ~

উত্তরপুরুষ
লেখক: তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশক: আনন্দ প্রকাশনী
দাম: ১৫০

"তার বাবার দরকার নেই। মায়ের দরকার নেই। জাত-কূল-গোত্র-ধর্ম কিছুর দরকার নেই। কারণ সে জানে তার অন্য কোনও পরিচয়ের কোনও মানে নেই। তার একটাই পরিচয় সে বাংলা ভাষায় কথা বলে।"
গল্পের শেষের এই উক্তিটাই গোটা গল্পের সারমর্ম হিসেবে ধরে নিলে ভুল হয় না। এই উপন্যাস যেন ভেতো বাঙ্গালীকে একটু নাড়িয়ে দেওয়ার উপাখ্যান,তাকে তার জাত্যাভিমান আর সংস্কৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার গল্প। বাঙ্গালীদের এক সময়ের সাংস্কৃতিক উপনিবেশ বলে পরিচিত বেনারস,যেখানে এখন বাংলা ঐতিহ্য অস্তিত্বের সংকটে টালমাটাল,সেখানে এক পিতা-পূত্রের সেই সংকটকে জয় করার লড়াই,শুধু তাকে টিকিয়ে রাখায় নয়,তাকে সগৌরবে তার পুরোনো সিংহাসনে ফিরিয়ে আনার লড়াই। আর তার সাথে রয়েছে বেনারসের এক প্রচন্ডভাবে জলজ্যান্ত এক বর্ণনা,যা শুধু নিছক বর্ণনার জন্য বর্ণনা নয়,তাতে রয়েছে সেখানকার ঐতিহ্য,সেখানকার সংস্কৃতির এক অপূর্ব চিত্রাঙ্কণ। ঘাটের পাশে শতানিক,বীশ্বেশ্বর আর স্বাতীর সংলাপ গুলো পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল যেন তাদের পাশে বয়ে চলা হাওয়া টা আমাকেও ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে!! এবং খুব সুন্দর লেগেছে তমালদার উপস্থাপনাও। আলাদা করে কোনো চরিত্রায়নের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়নি,সেভাবে বলতে গেলে বেনারস আর বাংলাভাষার প্রতি আবেগটাই হল এই গল্পের মূল চরিত্র। কিন্তু খুব যত্ন ভাবে প্রতিটি চরিত্রের প্রতিটি পরিস্থিতিতে তাদের মুখের expression,তাদের পোশাক-আশাক এর বর্ণনা করা হয়েছে যা এই গল্পের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ন মনে হয়েছে। তমালদার এটা একটা নিজস্ব ধরণ গল্প বলার,চরিত্র গুলোর আপাদমস্তক বিবরণই অনেক সময় পাঠকের মনে সেই বিশেষ পরিস্থিতির গুরুত্বটা অনেকটাই পরিষ্কার করে তোলে। গল্পের সংলাপগুলো অবশ্য মাঝেমধ্যে একটু বেশিই রাশভারী মনে হয়েছে। দুটো মানুষের মধ্যে প্রথম প্রথম আলাপ হলে সকলেই একটু দ্বিধাগ্রস্থ থাকে যেটা সময়ের সাথে সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরী হওয়ার সাথে কেটে যায় এবং তাদের কথাবার্তাও তখন অনেকটা হাল্কা হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে লেখক সেই ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠার আভাষ দিলেও তাদের কথোপকথন টা কে সেই ভাবে হাল্কা দেখাননি,সেই প্রথম আলাপের মতই ভারীক্কি ধরণের formal মনে হল। এই খামতি টুকু বাদ দিলে "উত্তরপুরুষ অবশ্যই একটা "must read" বই। আমরা শুধু ভাষা আন্দোলনেরই কথা শুনেছি বা পড়েছি,কিন্তু ভাষা নিয়ে এ হেন অনুভূতির নিদর্শনও অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি করে রাখা ভালো। এই গল্পকে তাই আমি ১০ এর মধ্যে দিলাম ৮.৫........
পুনশ্চ: সত্যি প্রেম কত নিষ্ঠুর,নারীসঙ্গের লোভ কত বিচিত্র। আপাত দৃষ্টিতে একে অপরকে চরম শ্রদ্ধা করা বন্ধু অথচ কত সহজেই এক বন্ধু তার এক বন্ধুকে "অপদার্থ" "practically hopeless" বলে দিল কোনো রকমের কোনো অনুকম্পা ছাড়াই। অবশ্য গল্পের প্রেক্ষাপটের দিক থেকে এর বিশেষ তাৎপর্য মনে হল না এবং গল্পের এই অংশটা না থাকলেও বিশেষ কিছু অসুবিধে হত না। তার বদলে গল্পের এক জায়গায় হটাৎ করে এক প্রতিষ্ঠিত উদার চরিত্রের এই রকম একটা cynical(এবং কিছুটা arrogant ও) মন্তব্য একটু বেখাপ্পা লাগল......

কবিতা :ব্যার্থতার জন্য ~ অভিজিত রায় চৌধুরী

ব্যার্থতার জন্য
                   অভিজিত রায়  চৌধুরী  
















তুই হলি সংসারী নারী। সংসার তোর জীবন
আমি হলাম বাউল ফকির, আমার বেয়াক্কেলে মন
তুই বুকের ভেতর পাথর চাপিয়ে আবার রাঁধতে যাস
আর অন্ধকারে রাতের গভিরে, শরীর চিবিয়ে খাস
আমার কাছে সবই মায়া, মায়াতে জড়ান তুই
তাই মায়া-র জরান বালিশ নিয়ে, প্রতি রাত্রে শুই
আবার কক্ষন সবকিছু ভুলে রাতদিন করি পান
আমি অন্ধকারে রাতের গভিরে, খেপা বাউলের গান।
তোর কাছে আমি। বোমা ফেলবার নাগাসাকি হিরোশিমা
বাউল মনে সংসারি হলি, তোর হয়েছে জীবন বিমা
তবু বোমাফেলে তোর তীক্ষ্ণতা, আজ দিনের শেষে সুক্ষ
আর অন্ধকারে রাতের গভিরে, পাগলীর মনের দুঃখ....

পুস্তক পর্যালোচনা ~ অনীশ ভৌমিক

অনীশ ভৌমিকের ‎পুস্তক পর্যালোচনা:-      
পুস্তক:“মায়াকাচ”
লেখক:  তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় 
প্রকাশক: আনন্দ প্রকাশনী
দাম:১৫০/- (ইং ২০১২,)

মফস্বলের অন্তর্মুখী ও ভাবুক তরুণ কৃষ্ণেন্দু আশৈশব তার কাকাদাদু তপনকান্তির সাহচর্য্যলাভ করায় তাঁর দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত। আদর্শবাদী ও একসময়ের নরমপন্থী সাম্যবাদী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য অববিবাহিত তপনকান্তি নিজের অনমনীয় ধ্যান-ধারণার কারণে অচিরেই হয়ে উঠেছিলেন “সম্পৃক্ত দ্রবণে ভাসমান অদ্রাব্য বস্তুর মতো” পারিবারিক-জীবনে নিতান্তই প্রান্তিক এক সদস্য। সামাজিক উপেক্ষার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কৃষ্ণেন্দুর মধ্যেই তাই তপনকান্তি নিজের অচরিতার্থ ইচ্ছেগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সবার অলক্ষ্যে কিছুটা স্বেচ্ছাচারীর ঢঙে বপন করে দিয়েছিলেন এক তথাকথিত অচল ও বাস্তব-সাপেক্ষে অনুপযোগী জীবনবোধ। এদিকে স্বভাবগতভাবেই গতানুগতিকতার প্রবল বিরোধী হয়ে ওঠা কৃষ্ণেন্দু সাহিত্যের ছাত্র হবার পর থেকেই যেতে চায় সংখ্যাগরিষ্ঠের সহজ সাবলীল জীবনযাপনের বিপরীতে , পদে পদে নিজের ভুলভ্রান্তি-পরবর্তী আত্মসমীক্ষা ও আত্মকরুণার পৌনঃপুনিকতা সত্ত্বেও সে ‘শিল্পকলা’ নামক সময়োত্তীর্ণার সাধনার উচ্চাকাঙ্খায় অন্যমনস্ক । নিজের অপ্রচলিত চিন্তাভাবনার দৃঢ়তায় বরাবরের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরে ক্রমশই যখন ছাত্রছাত্রীমহলে কৃষ্ণেন্দুর ভাবমূর্তি হয়ে উঠছে নিতান্তই ‘এক সৌজন্যহীন, অহঙ্কারী ও আত্মকেন্দ্রিক যুবক’ হিসেবে, তখনই সে অযাচিতভাবে সান্নিধ্য পায় মিশুকে সহপাঠিনী নন্দিনীর। চেহারায় বিন্দুমাত্র দৃষ্টি-নান্দনিকতাহীন নন্দিনীর শুভাকাঙ্খা ও শর্তহীন মানসিক সমর্থন পেয়ে কৃষ্ণেন্দুর একাকিত্বে জর্জরিত, সঙ্গলিপ্সু অহম্‌ চরম তৃপ্তিতে স্ফীত হয়ে উঠলেও , প্রতিনিয়ত তাকে করতে হয় ইন্দ্রিয়-দাসত্ব থেকে মুক্তির মানবিক সাধনা। পারিবারিক অশান্তির অভিঘাত, আসন্ন পরীক্ষায় নিজের প্রস্তুতিহীনতার উপলব্ধি এবং নিজের অসহায়তাজনিত প্রবল হতাশায় ক্রমাগত বিপর্যস্ত কৃষ্ণেন্দুর শারীরবৃত্তীয় দর্শনক্রিয়ার যান্ত্রিকতার কাছে বশ্যতা স্বীকার না করে, দৃশ্যপটের প্রতিবিম্বকে মস্তিস্ক-সঞ্জাত হবার আগেই কোনো কল্পনা-প্রসূত ‘মায়াবী কাঁচ’ দিয়ে তাকে কাঙ্খিত রূপদান করার এক অলীক ও হঠকারী প্রচেষ্টার পরিণাম কি ধ্বংসাত্বক হতে পারে—তারই এক অসাধারণ ও মোহময় আখ্যান রয়েছে এই উপন্যাসে।

“ঘাতক”-নামক আরেকটি ‘আধুনিক পরিবর্তনশীল মনস্তত্ব’-বিষয়ক অনুপম উপন্যাস দিয়েই লেখকের সৃষ্টির সাথে আমার প্রথম পরিচয়। কিন্তু, ‘মায়াকাচ’ পড়ার পর এ কথা বলতে পারি যে অনবদ্য পরিবেশনশৈলী ও অত্যুত্কৃষ্ট শব্দবন্ধন সহকারে যেরকম সযত্নে এই সুখপাঠ্য কাহিনীটির অবতারণা করা হয়েছে – তাতে পাঠকের মানসপটে এক দীর্ঘস্থায়ী মুগ্ধতাক্ষেপণে লেখক স্বয়ং যেন এবার এক ‘ঘাতক’-এর ভূমিকায়!

Thursday 25 June 2015

কবিতা : শ্রোতা ~ শ্রাবনী খান

শ্রোতা-
আমাদের সংসারে আমরা সবাই বেশ ভালো বক্তা তবে
কেউ কারোর কথা শুনিনা 
শ্রোতা শুধু মা 
আমরা যে যার কথা গড় গড় করে মা-কে বলে যাই , মা নির্বিবাদে শুনে যায় ...
বাবার নেশা চা পাতাতে 
"কই গো শুনছো " বলে বাবা শুনিয়ে যায় কোন চা পাতার কি বিশেষত্ব , পাতা চা ভালো না দানা চা , আসাম চা-এ গ্যাস -অম্বল বেশি হয় নাকি দার্জিলিং চা- এ , কোনটা কতটাকা কিলো এই সব আর কি 
মা শুনে যায় নিঃশব্দে
কাকার কারবার ওষুধ নিয়ে 
কোন প্রোডাক্ট বাজারে একবার খাওয়াতে পারলে লাভে লাল হওয়া যাবে , কোন ওষুধ খাবার তো চুনোপুঁটি নাড়িভুড়ি পর্যন্ত হজম করিয়ে দেবে , কিসে কমবে কোলেস্টেরল , বাতের ব্যথা ইত্যাদি ইত্যাদি...
শুনতে শুনতে মা-র বয়স বেড়ে যায়
ঠাম্মার ধ্যান জ্ঞান ঠাকুর দেবতা, বলেন ... মেজ বউ , ঘুম থেকে উঠেই হরিনাম জপবে , আর ভুলেও যেন আয়না দেখোনা ... কলঙ্ক হয় ... আর হনুমান চালিসা , লক্ষ্মীর পাঁচালী খানা আরেকটু সুরেলা করে পোড়ো
কাপড় গুছোতে গুছোতে,বিছানার চাদরের কুঁচকে যাওয়া জায়গাটা ঠিক করে দিতে দিতে মা শুনে যায়
তারপর সন্ধ্যে বেলা আমি মাকে কবিতা নিয়ে কি ভাবছি বোঝাতে শুরু করি ... বলে যাই কবিতা ব্যাপারটা ঠিক কতটা অপ্রত্যাশিত , কতটা আলো আঁধারী ..
একের পর এক শুনিয়ে যাই সুনীল,শক্তি,জীবনানন্দ ...
তরকারী কুটতে কুটতে,উল বুনতে বুনতে মা শোনে , মুখে ভেসে থাকে একটা কবিতার মতই রহস্যময়ী হাসি ..
বাবার চা পাতা, কাকার ওষুধ , ঠাম্মার ঠাকুর-দেবতা আর আমার কবিতার কম্বো প্যাক-এর তলায় চাপা পড়তে পড়তে, মা-র না বলা কথা গুলো জীবাশ্ম হয়ে যায় ...
আমি সেই কল্পিত জীবাশ্ম থেকে একটা বিষন্ন প্রজাপতির মত দীর্ঘশ্বাসের ছাপ খুঁজে নিই
তারপর সেই মৃত ডানায় ভর দিয়ে
স্বার্থপরের মত
কবিতা লিখতে চাই ...
২৫.০৬.২০১৫

বইপোকার নেওয়া বিনোদ ঘোষালের সাক্ষাত্কার :~

একটি নতুন বিষয়ের অবতারণা করতে চেষ্টা করলাম, যদি সকলের মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে তাহলে ভবিষ্যতে এরকম সাক্ষাত্কার আরও তুলে আনার চেষ্টা করব। একটু সারপ্রাইজ দেবার জন্যেই আগে এ নিয়ে কিছু বলিনি বা অ্যাডমিনদের সাথেও আলোচনা করিনি (অরিন্দমদার সাথে অবশ্য কথা হয়েছিল)। কারো স্তাবকতা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, সঠিকভাবে পাঠকের সাথে লেখক/ লেখিকার পরিচয় ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য। 

আজকের অতিথি নবীন সাহিত্যিক বিনোদ ঘোষাল


বইপোকাঃ নমস্কার বিনোদদা, প্রথমেই বইপোকার তরফে আপনাকে স্বাগতম জানাই।
বিনোদ ঘোষালঃ আপনাকে এবং বইপোকার সকল সদস্যকে আমার নমস্কার।
বইপোকাঃ আপনাকে অনেক অভিনন্দন জানাই ‘প্রাণের পরে’ উপন্যাসটির জন্য। আনন্দবাজার পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যায় লিখতে পারার একটা আলাদা ঐতিহ্য থাকেই। আপনি কি বলবেন?
বিনোদ ঘোষালঃ হ্যাঁ কথাটা অবশ্যই খাঁটি সত্যি কথা। আনন্দবাজার পত্রিকার একটি সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। প্রচারের দিক থেকেও এই পত্রিকা অন্যান্যদের থেকে এগিয়ে। সুতরাং একজন তরুন লেখক হিসেবে ঐ পত্রিকায় লেখার সুযোগ পাওয়াটা একটা বড় প্রাপ্তি সন্দেহ নেই। আমি বৃহত্তর পাঠকের কাছে পৌঁছতে পেরেছি এই পত্রিকার মাধ্যমে।
বইপোকাঃ আচ্ছা এই যে ‘প্রাণের পরে’ উপন্যাসের পটভূমি, এতো একেবারে এই সময়ের বলা যায়। মানে আমরা ফেসবুকে মগ্ন থাকি, সেখানে সম্পর্ক ভাঙে গড়ে; আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ যারা পরস্পরের সাথে নানা বিষয়ে তর্কে যুযুধান হয় কিন্তু তারাই আবার কারো নিন্দা করার জন্যে মুহূর্তের মধ্যে এক হয়ে যায়, এসব তো খুব দৈনন্দিন ঘটনা। আপনি যখন এরকম বিষয়বস্তু নিয়ে লিখবেন ভাবলেন এটা কি ভেবেছিলেন যে সস্তার বিষয় না হয়ে যায়?
বিনোদ ঘোষালঃ সোসাল সাইট আসবার পর আমাদের জীবন এখন অনেকটাই ভারচুয়াল। আমি এই প্রজন্মের লেখক। সুতরাং আমাকে এই সময়ের কথা কিছু লিখতে গেলে অবধারিতভাবে মোবাইলফোন কিংবা ফেসবুকের কাছে কখনও আসতেই হবে, তাকে অগ্রাহ্য করতে পারি না। এখন ফেসবুক খারাপ না ভালো সেই বিতর্ক অন্য, কিন্তু বিষয়টি এই মুহূর্তে অমোঘ সেটাই বড় কথা। আর দৈনন্দিন ঘটনা নিয়ে লেখার কথা বলতে গেলে বলতে পারি যে কোনও সাহিত্যই আসলে কোনও জীবনের রোজনামচাই বটে। এবার তাকে আমি কীভাবে দেখলাম বা তাকে কীভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিলাম সেটাই দেখার। ঢোঁড়াই চরিত মানসে কিন্তু সতীনাথ ঢোঁড়াইয়ের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ঘোটে যাওয়া কথাকেই বলেছেন, কিন্তু তা এমনই অসামান্য হয়ে উঠেছে যা আজও আমাদের মুগ্ধ করে। আসলে কোনও শিল্পই তো আকাশ থেকে আচমকা পড়ে না, শিল্পীকে তার পারিপার্শ্বিক দৈনন্দিন জীবন থেকেই শিল্পের রসদ খুঁজে নিতে হয়। এর মধ্যেই মণিমক্তো ছড়ানো রয়েছে। এবার যে যতবেশি সেইগুলি তুলে আনতে পারেন সেগুলিই সেরা কাজ হয়। তাই সস্তা বা দামিটা বিচার হয় অন্যভাবে। শিল্পী বা লেখকের দেখার-প্রকাশের গুনে।
বইপোকাঃ নতুন জেনারেশনের অনেকে বলছে আপনার সৃষ্টি চরিত্রে নাকি নিজেদের খুঁজে পাচ্ছে!
বিনোদ ঘোষালঃ আমি আমার লেখায় সেটাই চেষ্টা করি। আর আমার পাঠকরা যদি সত্যিই নিজেকে খুঁজে পান তা আমার কাছে অবশ্যই আনন্দের।
বইপোকাঃ এই উপন্যাসে নূপুর একটি ভারী অদ্ভুত চরিত্র, যে বয়সে বেশ ছোট একটি ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন বুনছে, শারীরিক চাহিদার টানেও বটে। এধরনের মেয়েদের বিদেশে Cougar বলে, কিন্তু এদেশে এই চল কম। এই সাহসী ঘটনা তুলে আনার প্রেক্ষাপট?
বিনোদ ঘোষালঃ নূপুর চরিত্র আন্তর্জাতিক। সারা পৃথিবীতেই এমন রয়েছে। আমাদের পাড়াতে এমনকি আপনাদের পাড়াতেও রয়েছে নিশ্চয়ই। এমনকি সে হয়তো আমাদের অতি পরিচিত কিংবা পরম আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেও কেউ হতে পারেন। এটা সত্যি। আর একজন লেখকের কাজ হল সত্যি কথা বলা। আর সত্যি কথা বলতে সাহস তো অবশ্যই লাগে। আমার সাহস দেখানোর জায়গা লেখা। তাই দেখাই।
বইপোকাঃ একদম পাঠকের মনের কিছু প্রশ্ন করতে পারি কি?
বিনোদ ঘোষালঃ নিশ্চিন্তে।
বইপোকাঃ আপনার লেখা কি পেশা? নাকি অন্য কোনও পেশায় আপনি যুক্ত?
বিনোদ ঘোষালঃ এই গত পরশু দিনেও আকাশবাণী থেকে আমাকে একটি সাক্ষাত্কারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তরুন প্রজন্মের যদি কেউ লেখাকে পেশা করতে চান তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন? আমি বলেছিলাম, বাংলা ভাষায় লেখাকে পেশা করতে গেলে আজও অন্তত সাড়ে আঠেরোবার ভেবে নেওয়া দরকার যে আমি অনিশ্চিতকালের জন্য হাফপেট খেয়ে চুড়ান্ত আর্থিক অনিশ্চিয়তা নিয়ে লড়াই করে যেতে পারব কি না। যদি মনে হয় পারব তাহলেই লেখাকে পেশা হিসেবে ভাবা যেতে পারে। অন্যথায় এটিকে মূল্পেশার পাশাপাশি রাখাই ভাল। সমারসেট মম বলেছিলেন, হয় আপনি হোল টাইম লেখক, কিংবা আপনি লেখকই নন’। কিন্তু আমাদের বাংলায় আজও ভালো অনুবাদক নেই। পাঠকের পাঠ অভ্যাস আগের থেকে কমেছে। সুতরাং একজন লেখকের লড়াইটা কিন্তু ভয়ংকর। আমি একজন কমার্স গ্র্যাজুয়েট।দীর্ঘ দশ বছর এ্যাকাউন্টসে চাকরি করেছি। তারপর যখন বুঝেছি যে আমার দ্বারা একজন ভালো এ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়া এই জীবনে সম্ভব নয় তখন ছেড়ে দিয়ে একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদান করি। এখন আমাদের কাগজের জন্যও লিখি, নিজের লেখাও লিখি।
বইপোকাঃ ‘প্রাণের পরে’ কি আপনার প্রথম উপন্যাস?
বিনোদ ঘোষালঃ না, আমার প্রথম উপন্যাস মাঝরাস্তায় কয়েকজন। সেটা ২০০৬সালে লিখেছিলাম।
বইপোকাঃ জুন মাসের ‘শিলাদিত্য’ পত্রিকায় আপনার একটি ছোট গল্প ছাপা হয়। ‘শ্মশান, দিদি আর একটি বেশ্যা’। এটি পড়ে কেউ কেউ বলেছেন দুর্দান্ত, কেউ বলছেন সন্দীপনের পরে এত স্পষ্ট ভাবে সমাজের কথা তুলে ধরার মত কাউকে লিখতে দেখা যাচ্ছে, অনেকে ভাইয়ের চরিত্রকে ঘৃণা করেছেন মন থেকে। এরকম একটি দুঃসাহসী সাইকোপ্যাথকে নিয়ে এলেন কীভাবে?
বিনোদ ঘোষালঃ আজ থেকে বছর দশেক আগে আমি যখন লেখালেখি শুরু করি তখন আমি মোটেও সচেতন ছিলাম না যে আমি কেন লিখছি আর কী লিখতে চাই। এত বছর ধরে ঘসতে ঘসতে এখন নিজের কাছে মোটামুটি একটা দর্শন তৈরি হয়েছে।অনেকে বলেন যে আমি অন্ধকারের গল্প লিখি। আমার লেখায় আলো নেই, শুধুই কালো। সত্যি বলতে আমি এই কথাকে অস্বীকার করি না। আমি কালো গল্পই বেশি লিখি। ইংরিজিতে যাকে ব্ল্যাক স্টোরি বলে। আমাদের বাংলাতেও জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, মতি নন্দী থেকে শুরু করে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এবং এই সময়ের নবারুন ভট্টাচার্য অসংখ্য এই ধরণের গল্প উপন্যাস লিখেছেন। এবং আমি একবাক্যে তাদের লেখার দ্বারা অনুপ্রানীত। সব লেখক নরম নরম আলো দেখালে কালোগুলো কে দেখাবে? ঘরে আলো জ্বালানোর জন্য যেমন ইলেক্ট্রিশিয়ান লাগে তেমনি বাড়ির পিছনে সেফটি ট্যাঙ্কে জমে ওঠা পাঁকগুলোকে সরানোরও তো লোক প্রয়োজন হয়। শিলাদিত্য পত্রিকার গল্পটি তেমনই এক অন্ধকারের গল্প। সত্যি বলছি এই লেখাটা লেখার সময়ে আমি এককটা মহূর্তে হাউ হাউ করে কেঁদেছি। এত নির্মমতা আমি নিজেও সহ্য করতে পারিনি। কিন্তু থামতেও পারিনি। একটা ঘোরের মধ্যে একটানা লিখে শেষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম গল্পটা প্রকাশ পেলে আমার পাঠকেরা ঘৃনায় নাক কুঁচকে ফেলবে। আমাকে তুমুল গালাগাল করবে। কিন্তু অবাক হয়ে গেলাম এই গল্পটার জন্য আমি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঠকদের তুমুল প্রশংসা পেয়েছি এবং আজও পাচ্ছি। এই গল্পের মুগ্ধপাঠকের মধ্যে যেমন বর্ষীয়ান নাট্যকার চন্দন সেন রয়েছেন তেমনই অগনিত তরুন প্রজন্মের পাঠকও রয়েছে। আমি শিলাদিত্য পত্রিকাকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবো এই গল্পটি প্রকাশের সাহস দেখানোর জন্য। আরও একটা কথা বাংলায় সিরিয়াস পাঠকের সংখ্যা বিন্দুমাত্র কমেনি তার প্রমাণ পেয়েছি আমি এই গল্পের প্রতিক্রিয়া থেকে। খুব উত্সাহ পেয়েছি।
বইপোকাঃ আপনি কি জানেন আপনার ছোট গল্প আর গল্প পড়েই অনেক ফ্যান হয়ে গেছে আপনার লেখার?
বিনোদ ঘোষালঃ ২০১১ সালে আমার প্রথম গল্প গ্রন্থ ডানাওয়ালা মানুষ সাহিত্য একাদেমি যুব পুরস্কার পায়। বাংলায় ওই বইটিই প্রথম ওই পুরস্কার পেয়েছিল। এবং ২০১৪ সালে আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ নতুন গল্প ২৫ পশ্চিমবঙ্গ একাদেমির সোমেন চন্দ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছে। দুটো পুরস্কারের উল্লেখ আগ বাড়িয়ে এই কারনে করলাম যে পাঠক আমার ছোটগল্পকে ভালোবাসছে, পছন্দ করছে। একজন লেখকের কাছে এর থেকে আনন্দের আর কীই বা হতে পারে।
বইপোকাঃ অনেক নতুন লেখক মিডিয়া হাউসের ভারে নিজের লেখার ধার না থাকা সত্ত্বেও নাম কিনছেন। আপনি কি এই মন্ত্রে বিশ্বাস করেন?
বিনোদ ঘোষালঃ একজন দার্শনিক, আমার এই মহূর্তে তাঁর নামটা মনে পড়ছে না, বলেছিলেন- একবিংশ শতাব্দিতে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই অন্তত কয়েক মিনিটের জন্য সেলেব হয়ে উঠবেন মিডিয়ার দৌলতে। কথার আইডিয়াটা কিন্তু খুব ভুল নয়। তবে কয়েক মিনিটের জন্য সেলেব হয়ে ওঠাটা কোনও কাজের কাজ নয়, অন্তত শিল্পের জন্য তো নয়ই। জনপ্রিয়তা কখনই শিল্পের একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। মিডিয়া সকলকেই ঘুরে ফিরে হাইপ দেয়। এটা তার কাজ। এবার যার কোয়ালিটি রয়েছে তিনি টিকে যান বাকিরা হারিয়ে যায়।
বইপোকাঃ ‘প্রাণের পরে’ উপন্যাসে আপনি নানা জায়গায় নানা বইয়ের কথা এনেছেন, আমরা কি ধরে নিতে পারি আপনি নিজে একজন বইপোকা?
বিনোদ ঘোষালঃ হ্যাঁ। না পড়লে লিখব কী করে? সব আইডিয়া তো আর জীবন থেকে আসে না। বই থেকেও আসে। সুতরাং পড়তে তো হয়ই। নির্বিচারে পড়ি।
বইপোকাঃ প্রিয় লেখক?
বিনোদ ঘোষালঃ অনেকেই রয়েছেন তবে যাদের গুরু বলে মানি তাদের মধ্যে সদত হসন মান্টো, 
সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, আল মামুদ, মতি নন্দী।
বইপোকাঃ প্রিয় বই?
বিনোদ ঘোষালঃ বই আমার কাছে একটি প্রিয় শব্দ।
বইপোকাঃ বই নিয়ে থাকা কোন অবসেশন?
বিনোদ ঘোষালঃ রাত্রে ঘুমোনোর সময় আমার বাঁ পাশে বউ থাকে আর বালিশের নিচে কোনও একটা বই।
বইপোকাঃ লিখতে বসে লেখার ফ্লো না এলে কি করেন?
বিনোদ ঘোষালঃ ফেসবুক করি। ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করি। সিনেমা দেখি।
বইপোকাঃ পাঠক এবং নতুন লেখকদের কোনও পরামর্শ দিতে চাইবেন?
বিনোদ ঘোষালঃ পাঠকদের আর কী পরামর্শ দেব! শুধু বলব নতুনদের বইও কিনে দেখুন। আর নতুন লেখকদের বলব নিজের লেখাটা লিখে যাও। নিজের গলায় নিজের স্বরই মানায়, তাহলেই লোকে শুনবে। আমি যদি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্টাইলে কথা বলতে যাই তাহলে লোকে হাসবে। আর যা বিশ্বাস কর তাই লেখো। অবিশ্বাস থেকে লেখা আসে না।
বইপোকাঃ এখন কি লিখছেন?
বিনোদ ঘোষালঃ পূজো সংখ্যার জন্য গল্প।

বইপোকাঃ ‘বইপোকা’র মত গ্রুপ নিয়ে কি বলবেন? এখন অনেক সাহিত্যপ্রেমী, লেখক, লেখিকারাও সমীহ করেন এই গ্রুপকে। এই যুগে বেশি বই কেউ পড়েনা এই অপবাদের দেওয়াল কি ‘বইপোকা’ ভাঙছে মনে করেন?
বিনোদ ঘোষালঃ যারা সোসালসাইটের শুধু নিন্দে করেন তাদের এটাও দেখা উচিত যে বইপোকার (https://www.facebook.com/groups/boipoka.writers/) মতো গ্রুপে বইপ্রেমি তরুন ছেলেমেয়েরা কতকিছু করছে। কতকিছু ভাবছে। এবং তারা সোজাসাপটা কথা চড়া গলায় বলে দিতে পারে। ভন্ডামো করে না। এমন গ্রুপ আরও তৈরি হোক।

বইপোকাঃ আপনার সাথে কিছু মুহূর্ত ভাগ করে নিতে পেরে ভালো লাগছে খুব, কামনা করি নতুন লেখাগুলিও সাফল্যের মুখ দেখুক। ভালো থাকুন,ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------
এই সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন আমাদের সদস্য অভীক মুখার্জ্জী

পুস্তক পর্যালোচনা ~ সুচরিতা দত্ত

সুচরিতা দত্তর পুস্তক পর্যালোচনা :-
পুস্তক: ২৪ নম্বর শ্যামানন্দ রোড
লেখক: সবুজ মুখোপাধ্যায় 
প্রকাশক: উনজন
দাম:১০০ 


   

 বড় বোকা বোকা ছিল সেই দিনগুলো.... সেই 'জলছবি, রংমশাল, স্কুলছুটির হজমিরা, রূপকথার পায়রাদের' দিনগুলো .. সেই ভাড়া বাড়ির পাড়ায় সব ছেলেমেয়েরা মিলে সারাদুপুর হুটোপুটি করে খেলে বেড়ানোর দিনগুলো, সেই সাদাকালো টিভির দিনগুলো, সেই বাড়িতে প্রথম টেলিফোন আসার দিনগুলো, কিন্তু বড় মিঠে ছিল যে সেসব.. মিষ্টি ভালোলাগার আলগা চাদর জড়ানো সে সব দিনের অস্তিত্ব এখন শুধুই আমাদের মনের মনিকোঠায়.. সত্যি কত তাড়াহুড়োয় কেটে গেল না দিনগুলো!!!!!!!!! মাঝে কটা বছর কেটেছে? ২০ টা... বড়জোর ২২ টা বছর.. এর মধ্যেই আমাদের চিরপরিচিত সাঁতসাঁত-এ সোঁদা গন্ধের দেয়াল, সরু অন্ধকার সিড়ি, দেয়ালের ফাঁক-ফোকরে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা 'বট- অশথ' গাছ সব জি+3 = বহুতল + একক পরিবার এর ফর্মুলায় হারিয়ে গেল.. হয়ত বিশ্বায়ন দায়ী, হয়ত বা আমরা বড্ড তাড়াতাড়ি গ্লোবাল হয়ে গেলাম.. অবধারিতভাবেই যার প্রথম কোপ পড়ল সাবেকি বাড়িগুলোর উপর.. আজ কলকাতার সর্বত্রই 'গ্লোবাল' কলকাতার 'কসমোপলিটান' সংস্কৃতির ধ্বজাধারী বহুতল এর ভিড়.. আজ আমরা 'লন্ডন' হচ্ছি.. অদূর ভবিষ্যত এ হয়ত সিঙ্গাপুর বা টোকিও-মেক্সিকো হব.. এত হচ্ছি- হবর ভিড়ে কোথায় হারিয়ে গেল প্রাসাদ নগরীর সেই নোনা ধরা সাবেকি ঘরবাড়িগুলো ? কেমন ছিল 'প্লেন লিভিং' চিন্তাধারার অধিকারী সেই সব বাড়ির বাসিন্দা মধ্যবিত্ত সমাজ? মাত্র দু'দশক এর ব্যবধানেই যারা 'সেকাল' হয়ে গেল ? এর সদুরত্তর মিলবে সবুজ মুখোপাধ্যায় এর '২৪ নম্বর শ্যামানন্দ রোড' এ.. চিরপরিচিত চেনা শব্দের লেখনীতে বইটি যেন এক লিখিত নস্টালজিয়া-যা ফিরিয়ে নিয়ে যায় আমাদের ছোটবেলায় .... ধন্যবাদ রাজা পোদ্দার কে অসাধারণ এই বইটি প্রকাশ করার জন্য..  আর অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখক সবুজ মুখোপাধ্যায় কে এরম এক নস্টালজিয়া আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য... বইটির দ্বিতীয় খন্ডের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম... যেসব বইপোকা এখনো পড়েননি বইটি, তাদের বলব দেরী করবেন না এই নস্টালজিয়ার সঙ্গী হতে .

 এই বইটি পাওয়া যাবে :
 সাউথ - স্টাডি -যাদবপুর (কফি  হাউস), কল্যাণ দা'স ষ্টল  (রাসবিহারী  মরে); সেন্ট্রাল  - দে  বুক  স্তরে , দে'স  পাবলিকেশন , বৈচিত্র .ধ্যান্বিন্দু (কলেজ স্ট্রিট)  পাতাবাহার  (কলেজ  স্ট্রিট), 

নর্থ  - এন্টারপ্রাইস  (ইনসাইড  সিন্থী  মোড় মার্কেট),

Wednesday 24 June 2015

কবিতা : দ্বিচারিতা ~ অভীক রায়ের

অভীক রায়ের কবিতা


দ্বিচারিতা


একটা সাক্ষাত হলেই আশেপাশের মৌসুমী বায়ুর মেলা বসে যায় কারও না কারও বুকের ফাঁকা মাঠে....

আর অসাক্ষাত এ কষ্ট গুলো আরও আষ্টেপৃষ্টে ব্যাগ গুছিয়ে পাড়ি দেয় ত্রিভুবন বিচরনে...

সাময়িক কথাবার্তা ঝড়ের সামনে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দেয় বুকের মধ্যে জমে থাকা ঘন কালো

মেঘটাকে।

আর ক্ষনিকের নিস্তব্ধতায়

অভিমানগুলো গর্ভবতী নদীর মতো ফুলে ফেঁপে উঠে ভাসিয়ে দেয় বুকের

জমিন।

মৌসুমীবায়ু, কষ্টে কালো মেঘ আর অভিমান এরা কোন পাহাড়ের পাদদেশে

একসাথে ঘুমায় জানা আছে??

আমি মৌসুমিবায়ুকে গুটিগুটি পায়ে ধানক্ষেতের আড়ালে যেতে দেখেছি আর দেখেছি তার নলকূপে নাচতে নাচতে স্নান...

আমি কষ্টকে ভিখিরির পেটে গরীবের ঘরে রোজ

সকালে দুটো বাসি রুটি

আর রাতের বেলায় ফ্যানের বাটিতে দেখেছি....

দেখেছি অভিমান কিভাবে আয়েশ করে পা ছড়িয়ে বসে ছিঁড়েখুঁড়ে খায় প্রেমিকার বুকে জমে থাকা ভালোবাসাকে....

তবু বারবার ধূলোচেটে

মাথা নত করতে হয়...

বুকের ভিতর থেকে ছুরিটাকে টেনে বের করে ঘুরে দাঁড়াতে হয় কবিতা লেখার সামনে....

এই আশা নিয়ে বারবার

কলম চালাই আর ভাবি

হয়তো কোনোদিন কালো মেঘ থেকে সুখের বৃষ্টি নেমে ধুয়ে দিয়ে যাবে সব কষ্ট সব অভিমান....

আর মৌসুমি বায়ু কানে

কানে চিৎকার করে বলে যাবে:"আমি ভালোবাসা আর ঘৃনাতে আছি...আমি বেয়নেট আর বীনাতেও আছি"





পুস্তক পর্যালোচনা~ শেষের কবিতা (বিপ্লব বেসরা)

শেষের কবিতার (বিপ্লব বেসরা) পুস্তক পর্যালোচনা:-


বৃষ্টি বিনিময়
লেখক: হর্ষ দত্ত
প্রকাশক: আনন্দ প্রকাশনী 
দাম: ১০০




আমার পড়া লেখকের প্রথম কোনো লেখা।এক কথায় বলতে গেলে বেশ ভালো লেগেছে। অনেক দিন পরে কোনো গল্পের সাথে একাত্ম মনে হল। গল্পের শুরু দুই জন কিশোরীর স্কুল ম্যাগাজীনে দু জন বিখ্যাত কবির দুটি কবিতা নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া থেকে ,যারপর শুরু হয় তাদের শাস্তি নিয়ে তোড়জোড়ের পালা। কিন্তু এর মধ্যেই জানা যায় ম্যাগাজীনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকা একসময় তাদের লেখাকে তাদের নিজের বলে বিশ্বাস করতে না পেরে তাদের ভর্ৎসনা করার ঘটনা,যার থেকে রাগে অভিমানেই তাদের এই কাজ করা। এরপরে চলতে থাকে ন্যায়-অন্যায়ের যুযুধান,কে ঠিক কে বেঠিক,কে বেশি দোষী,কে কম দোষী,কেন তারা ওই কবিতা টুকে দিল বা কেন ওই শিক্ষিকা সেই কবিতা চিনতে পারলেন না,কে আসল কালপ্রিট এই প্রশ্নের চারিপাশেই আবর্তিত হতে থাকে গল্পের ঘটনাপ্রবাহ।
লেখক হর্ষ দত্তের লেখনির মধ্যে একটা সরল ভাব আছে,তাতে খুব ভারীক্কি শব্দের প্রয়োগ করে অকারন দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা যেমন নেই তেমনি সহজ সরল লেখার নাম করে বাজারী সস্তা চটকারী শব্দের(যার প্রয়োগ বেশ কিছু বর্তমান পপুলিস্ট সাহিত্যিকই করে থাকেন) ব্যবহারও কিছু নেই। গল্পের সংলাপ এর প্রকৃতি খুবই বাস্তবিক এবং তাতে কোনো অযাচিত দর্শনের অতিরঞ্জন নেই। গল্পের মূল উপজীব্য আজকের সমাজে ছোটদের প্রতি বড়দের ধ্যানধারণা নিয়ে। এই rat race যুগে অনবরত সন্তানের উপর প্রত্যাশার চাপ,সেটা সবসময় পূরণ না হতে পারার জন্য বাবা মায়েদের আরো হতাশা ও সেখান থেকে আরো চাপ সৃষ্টির প্রবণতা আজকের দিনে নতুন কিছু নয়। গল্পের প্রধান বিষয় রূপে আলোকপাত না করলেও লেখক খুবই নিপুণ ভাবে তা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। শুধু একটা জিনিসই ভালো লাগল না,গল্পের একজন অন্যতম মূল চরিত্র সেই কিশোরীর একজন যাকে সারাটা গল্প জুড়ে বেশ একজন শক্ত পরিণত চরিত্র হিসেবে গড়ে তোলা হল তাকে গল্পের শেষে ওই ভাবে দূর্বল না করে দিলেও চলত হয়ত। গল্পের শেষের এই নাটকীয়তা বাদ দিলে গোটা গল্পটাই বেশ যত্নসহকারে লিখিত ও পরিবেশিত হয়েছে। এই উপন্যাসের জন্য আমি লেখককে দিলাম ১০ এর মধ্যে ৭.৫..



পুনশ্চ: নামকরণের সার্থকতা টি অবশ্য আমি বুঝে উঠতে পারিনি। কেউ বুঝে থাকলে সাহায্য করবেন।

পুস্তক পর্যালোচনা ~ অরুনাভ গঙ্গোপাধ্যায়

পুস্তক আলোচনা,
অরুণাভ গঙ্গোপাধ্যায়

বইঃ- “মানুষ অতুলপ্রসাদ”
লেখকঃ- পাহাড়ী সান্যাল
প্রকাশকঃ- সপ্তর্ষি প্রকাশন
দামঃ- ১৫০ টাকা

কয়েকদিনে পড়ে শেষ করলাম এই স্বল্পাকৃতি বইটি।
মিস্টার এ.পি.সেন থেকে ‘অতুল’দা’... অতুলপ্রসাদ সেনের সাথে পাহাড়ী সান্যালের ঘনিষ্ঠতা ছিল এই পর্যায়ের। ব্যক্তি অতুলপ্রসাদকে, তাঁর নিঃসঙ্গ গান-জীবনকে অন্তরঙ্গে দেখেছিলেন পাহাড়ী সান্যাল। সেই দেখারই এক আশ্চর্য সচিত্র আখ্যান এই বই।
১৯৭১ সালের ৯ই অক্টোবর ‘দেশ’ পত্রিকায় ছাপা হয় এই স্মৃতিচারণের প্রথম কিস্তি। কিন্তু তা সম্পূর্ণ হয়না। তার আগেই প্রয়াত হন পাহাড়ী সান্যাল। তবু পত্রিকায় প্রকাশের ঠিক চার দশক পরে, ২০১২ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এই বই। বইয়ের কথামুখে সম্পাদক অর্চি মিত্র বলেছেন- “সংগীতস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যত আলোচনা বাংলা সংগীতসাহিত্যে তার পরবর্তী স্রষ্টাদের নিয়ে তার এক দশমাংশও বোধহয় নয়। সামগ্রিক ভাবে বাংলা ভাষায় সার্থক সংগীতসাহিত্য কততটুকুই বা আছে সে প্রশ্ন কেউ তুলতেই পারেন। কিন্তু ঘটনা হল, যেটুকু আছে অতুলপ্রসাদ-রজনীকান্ত-দ্বিজেন্দ্রলালেরা সেখানে বিশেষ আলোচিত হননি বললেই চলে”। তাই অসম্পূর্ণ হলেও পাহাড়ী সান্যাল রচিত এই বিস্মৃতপ্রায় আখ্যানকে পুনরায় পাঠক সমুখে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে প্রশংসার্হ। যদিও এই লেখা সংগীতস্রষ্টা অতুলপ্রসাদকে যতনা বিশ্লেষণ করে তার চেয়ে বেশী করে তুলে ধরে অতুলদা’র সাথে তাঁর প্রিয় পাহাড়ীর সম্পর্ককে। হয়ে ওঠে ত্রয়োদশবর্ষীয় বালক পাহাড়ী ও মধ্যবয়সী অতুলপ্রসাদের অসমবয়সী বন্ধুত্বের চিত্রাঞ্জলি। এ লেখা তাই বড়ই ব্যক্তিগত। এবং কখনও কখনও একই কথার পুনরাবৃত্তিতে দুষ্ট (যদিও এই পুনরাবৃত্তির জন্য পাহাড়ী বাবু তাঁর লেখার মধ্যেই বারে বারে ক্ষমা চেয়েছেন পাঠকদের কাছে)। তবুও এই লেখার মাধ্যমে অতুলপ্রসাদের মতন গুণী মানুষের ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবন, পাহাড়ী বাবুর নিজের শৈশব ও কৈশোরের দিনরাত ও তাঁর প্রথম প্রেমের আখ্যান, তৎকালীন লক্ষ্ণৌ-এর জীবন, তার সংস্কৃতি এবং সেই জীবন ও সংস্কৃতিতে অতুলপ্রসাদ ও তৎসহ বাঙালী কমিউনিটির প্রভাব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।
কিন্তু এতসব সুন্দরের মধ্যেও কাঁটা হয়ে বিঁধে আছে এর অপটু প্রকাশনা। বইয়ের বাঁধাই কিংবা প্রচ্ছদ অথবা কাগজের মান নিয়ে বলছিনা। বলছি অসংখ্য মুদ্রণ প্রমাদ নিয়ে। যতি চিহ্নের এলোমেলো অবস্থান নিয়ে। পাহাড়ী বাবুর মতন এমন বিদগ্ধ মানুষ যখন কিছু রচনা করেছেন তখন আমরা ধরে নিতেই পারি যে তিনি নিশ্চয়ই এমন বালখিল্যের মতন প্রমাদগুলি ঘটাননি। এমন ভাবাটাও অস্বাভাবিক নয় যে, যে সময় এই লেখা ছাপা হয় ‘দেশ’ পত্রিকায় তখন তার সম্পাদক সাগরময় ঘোষ, তাঁর মত পণ্ডিত মানুষের চোখও নিশ্চয়ই এড়ায়নি! তাহলে তো এই-ই দাঁড়াল- এ ভুল বর্তমানকালের প্রকাশক ও সম্পাদকের। এমন একটি ইতিহাসের অংশকে যখন কাগজের আশ্রয়ে তুলে ধরা হয় জনসমক্ষে তখন কি আরও সচেতন হওয়া উচিৎ নয়?! আরও বড় কথা আমি যে বইটি পড়েছি সেটি দ্বিতীয় মুদ্রণ, জানুয়ারি ২০১৩! অর্থাৎ পরপর দুটি সংস্করণ ধরে এই ভুলগুলি চোখের আড়ালে লুকোচুরি খেলে যাচ্ছে! হায়রে বঙ্গীয় প্রকাশক! তবু আশায় বাঁচে চাষা! আশা রাখি এর পরবর্তী সংস্করণগুলিতে পাহাড়ী ও তার অতুলদা’র জীবনালেখ্যের প্রমাদমুক্তি ঘটবে।
পুনশ্চঃ- আনন্দবাজার পত্রিকার “রবিবাসরীয়”-তে প্রকাশিত আশিষ পাঠক রচিত অতুলপ্রসাদের নিঃসঙ্গ ও বেদনাময় ব্যক্তিজীবন নিয়ে রচিত “একার গান” রচনাটিও পরিশিষ্ট হিসেবে সংযুক্ত হয়েছে এই বইয়ে।

পুস্তক পর্যালোচনা- প্রসেনজিৎ বন্দোপাধ্যায়



নাম : বিষকন্যা
ধরন : কাল্পনিক উপন্যাস
রচনা : দেবতোষ দাশ
প্রকাশনা : পত্র ভারতী
দাম : ১৫০ টাকা

আনন্দময় জীবন
~~~~~~~~~~~~~
জলের প্রতিভা।
.
প্রথমে উপন্যাসটির এই নামই রেখেছিলেন লেখক দেবতোষ দাশ। নামটি চয়ন করেছিলেন জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা (‘তোমাকে’) থেকে। পরে ‘বাণিজ্যিক স্বার্থে’ নামটির পরিবর্তন ঘটান প্রকাশনার কর্ণধার ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। ফেসবুকের একটি গ্রুপকে দেওয়া ছোট সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন লেখক স্বয়ং।
.
নামের স্বার্থকতার চেয়েও বড় প্রশ্ন লেখকের এই প্রথম উপন্যাস কতটা স্বার্থক। পাঠের পরেই উপলব্ধি হবে যে পরম নিশ্চিন্তে নতুন উপন্যাসে হাত দিতে পারেন তিনি।
.
কবিতাময় এ উপন্যাস। বেশিরভাগটাই জীবনানন্দ। পাঠের সম্পূর্ণ আনন্দ তাই জীবনানন্দ অনুরাগীদেরই প্রাপ্য। তবে লেখকের প্রতিভায় বাকিরাও কিছুমাত্র বঞ্চিত হবেন না।
.
প্রথম পরিচ্ছেদে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অরিন্দম কর্মসূত্রে দীঘা বেড়াতে এসে বাসেই আলাপ সেরে ফেলেছে শ্রুতকীর্তির সঙ্গে। দ্বিতীয়তে পরের দিন খেলাচ্ছলে সমুদ্রে নেমে ঘটল অরিন্দমের মৃত্যু। এ কি দুর্ঘটনা, না কি হত্যা, না দুইই? যদি হত্যা হয়, তবে কে করল?
.
উত্তরের জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করার দরকার নেই শেষ পৃষ্ঠা অবধি। সঙ্গে-সঙ্গেই জবাব মিলেছে।
.
তবে বাকি আটত্রিশটি পরিচ্ছেদে কী রয়েছে? রয়েছে থামতে না চাওয়া পাতা ওলটানো আঙুল, রয়েছেন পরতে পরতে জীবনানন্দ আর কিছুটা শেকসপিয়ার, রয়েছে পাগল করা মধুজা সেন, রয়েছে রহস্যসন্ধানী ডিকে, হিংসা, প্রেম, কামনা, যৌনতা, আরও মৃত্যু, আরও কবিতাসহ জমাটি এক থ্রিলার।
.
হয়তো একটু বাড়িয়েই বলা হয়ে গেল। তাহলে কমগুলো এবার বলা যাক। কাহিনি অনেকটা চেনা পথে এগিয়ে জানা গন্তব্যেই শেষ হয়েছে। দুরন্ত কোনও চমক দিতে ব্যর্থই হয়েছেন লেখক। অপরাধীকে সামনে পেয়েও ঠকে যাবার, শিকার ফসকে যাবার যন্ত্রণা ও ধরা পড়ে যাবার উৎকণ্ঠা পাঠককে দিতে কোনোই চেষ্টা নেই। পৃষ্ঠাগুলো চোখ বড় বড় করে গোগ্রাসে গিলতে থাকলে ঠিক আছে, কিন্তু চোখ ছোট করে ফেললেই মুশকিল; তখনই ধরা পড়ে যাবে অপরাধের ধরন, কারণ, পারিপার্শ্বিকতা, যুক্তি, মোটিভ ও সম্ভাব্যতা বিষয়ে যাবতীয় অসঙ্গতি। কয়েক জায়গায় ‘পাঠকের নিশ্চয়ই স্মরণে আছে যে’ গোছের যে আদি বঙ্কিমী ধাঁচ অবলম্বন করে কাহিনির আধুনিকতায় হাস্যকর প্রলেপ দিয়ে ফেলেছেন। মধুজা সেনের শরীরে একটু বেশিই ঘুরেছেন এবং সম্পূর্ণ অকারণে মধুজা বাড়ি ঢুকে তার অন্তর্বাসদুটি কীভাবে খুলে ফেলছে অন্তত দু’বার তার বর্ণনা দিতে ভোলেননি। লেখক ইতিপূর্বে ছোটগল্পের মোড়কে লেখা প্রবন্ধগুলিতে তাঁর সুগভীর সাহিত্যজ্ঞানের যে পরিচয় দিয়েছেন তাতে তাঁর পত্রভারতীয় অনীশ-রঞ্জন গোত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে বলে তো মনে হয় না।
.
তবে দেবতোষ দাশের লেখনীকে ওসব মানদণ্ডে বিচার করা যায় না। যে নিপুণতায় তিনি কবিতার চাদরে একটি উপন্যাসকে সক্ষমভাবে জড়িয়েছেন, যেভাবে সংলাপ রচনা করেছেন, প্রাণপুরুষের সঙ্গে নিজের মনে মধুজার হাহাকার যেভাবে ব্যক্ত করেছেন, যেভাবে একটি সামান্য রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাসকে কাব্যময়তার সুগভীরে নিয়ে গিয়ে যে অলীক আনন্দ দান করেছেন, কবিতাকে পাঠকের আরও কাছের ও নিজের করে তুলেছেন তার জন্য সাত ভুল মাফ হতেই পারে। উপরি পাওনা হিসেবে যেভাবে মহিলাদের বিচিত্র সব সাজপোশাকের উল্লেখ তিনি করে গিয়েছেন একের পর এক তাতে কোনও মহিলারও নিজের ফ্যাশনধারণা সম্পর্কে লজ্জিত হওয়া আশ্চর্যের নয়।
.
উপন্যাসটি হয়তো একবার, কিন্তু বহু শব্দ বার বার পড়ার মতো। তাই হয়তো একটি পেনসিল নিয়ে পড়তে বসাই বিচক্ষণতার পরিচায়ক।
.
পত্র ভারতীর চেনা ঝকঝকে পরিবেশনা প্রশংসাপ্রাপক। দেবযানী ঘোষালের প্রচ্ছদ ও অলংকরণও যথাযোগ্য।
.
প্রথম উপন্যাসের জন্য নবীন সাহিত্যিক দেবতোষ দাশকে আন্তরিক অভিনন্দন। সার্থক হোক আপনার কলমের প্রতিভা।
.
____________________

প্রবন্ধ : লওণ্ডা নাচ ~অভীক মুখার্জী



লওণ্ডা নাচ নিয়ে কিছু কথাঃ
কাল রাতে ‘সাবধান ইনডিয়া ইউ . পি. ফাইটস ব্যাক’ –এর একটি পর্বে দেখছিলাম ‘লওণ্ডা নাচ’ নামক পেশাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনার ব্যাপারে।
ছোট গল্প। ভানু নামের একটি ছেলে সদ্য সাবালক হবার পরে বাড়ির অভাবের তাড়নায় ‘নাচনিয়া’ (পুরুষ হয়েও মেয়েলি পোশাকের অন্তরালে থেকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে অশ্রাব্য গানের তালে তালে নাচে যে) পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য তার পিতাও এই পেশায় লিপ্ত ছিলেন। পিতাকে জোর করে রাজি করিয়ে এবং মাকে লুকিয়ে ছেলেটি খুব অল্প দিনের মধ্যেই লওণ্ডা নাচিয়ে হিসাবে বেশ নাম করে (ভানু হয়ে যায় ভানুপ্রিয়া) এবং ভালো টাকা রোজগার করতে থাকে। কিন্তু জীবন সোজা পথে এগোয় না। ডাক পড়ে এক স্থানীয় মুরুব্বির মেয়ের বিয়েতে নাচার জন্য। সেখানে নাচার সময় ছেলেপক্ষের একজনের নেকনজরে (!!!) পড়ে যায় ভানুপ্রিয়া, তাকে ৫০,০০০ টাকার নগদ ইনাম দেওয়া হয়। কিন্তু ইনাম প্রদানকারী কমবয়সী ছেলেটি বুঝে উঠতে পারেনা যে ভানুপ্রিয়া মেয়ে নয় ছেলে (এতই ভালো ছিল ভানুপ্রিয়ার অভিনয় আর নাচের দক্ষতা)। মেয়ে পক্ষের কিছু মানুষ ইনাম প্রদানকারী ছেলেটির সাথে কদর্য রসিকতার তালে ভানুপ্রিয়া’কে তুলে আনে রাতে ছেলেটির ঘরে (তাতে সাহায্য করে ভানুপ্রিয়ার নাচনিয়া দলের এক পুরানো নাচনিয়া, যে ভানুপ্রিয়ার ক্রমোন্নতি দেখে জ্বলে যাচ্ছিল)। ইনাম প্রদানকারী ভানুপ্রিয়া’কে বলাৎকার করতে গেলে প্রকাশিত হয়ে পড়ে ভানুপ্রিয়া আসলে ভানু। ভানু সেই মুহূর্তে পালিয়ে গেলেও ছেলে পক্ষের ইজ্জৎ নিয়ে মেয়ে পক্ষের মানুষ ‘খেলা’ করায় তার মাসুল দিতে হয় ভানুর প্রাণ দিয়ে। পরে এই গল্পে (সত্য ঘটনা) পুলিশের সাহায্য নিয়ে অপরাধী ধরা পড়ে।
ওপরের যে কাহিনী বিবৃত করলাম এরকম রোজকার জীবনে ঘটে থাকে ভারতীয় গো – বলয় এর Eastern U.P. , Bihar ইত্যাদি অঞ্চলে। লওণ্ডা নাচ এখানে খুব সাধারণ ব্যাপার। প্রায় মাস ছয়েক আগে থেকে এই নিয়ে পড়া, তথ্য খোঁজার কাজ শুরু করেছিলাম, কিছু পেয়েওছি। কি অদ্ভুত জীবন এদের সেটা না পড়লে, না দেখলে বোঝা যাবে না। মনে হয় আমরা শুয়ে আছি, না ঘুমানোর কথা বলিনি, বললাম শুয়ে আছি। যে অর্থে শুয়ে থাকা তা হল নিজেদের গা বাঁচানো, যেমন মানুষ বাঁচায় বোমার আঘাত, গুলির আঘাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে, আমরা জেনেও চুপ করে থাকি।
সামান্য কিছু অর্থের চাহিদায় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অন্ধ্র, ওড়িশা থেকে কম বয়সী ছেলেরা উপরোক্ত অঞ্চলে ভিড় জমায় ‘নাচনিয়া’ হবার তাগিদে। এর মধ্যে প্রভেদ থাকে; কেউ শুধুই টাকার জন্য মেয়ের পোশাকে নাচে, কেউ মেয়েলি স্বভাবের তাই এই পেশা বেছে নেশার সাথে মিশিয়ে নেয়, অনেকে আবার নিজের লিঙ্গ কর্তন (লিকম ছিবড়ানো, লিকম= লিঙ্গ) করিয়ে হিজড়াদের খোলিতে নাম লিখিয়ে এই পেশায় আসে।
ভারতীয় গো – বলয় এর Eastern U.P. , Bihar ইত্যাদি অঞ্চলে বিয়ের বরযাত্রী বা ‘বারাতি’ এলে তাঁদের নেচে ‘স্বোয়াগত’ করতে / ‘বারাতি’র দলের সামনে নেচে নেচে আসার জন্য লওণ্ডা নাচিয়েদের দরকার হয়। ইতিহাস বলছে প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই প্রথার প্রচলন। মেয়েদের পর্দানশীন হবার কারণে ছেলেরাই এই পেশায় নাম লেখায়, তাছাড়াও মূলস্রোত ব্যতীত হিজড়া সমাজের মানুষ এতে অংশ নেন।
নাচ চলতে থাকে, রাত বাড়তে থাকে। মদের ফোয়ারার ছটকানিতে বারাতির দল ভুলে যায় নাচনিয়াদের লিঙ্গ (অবশ্য বিকৃত কাম লিঙ্গ ভেদ দিয়ে বিচার করা মূর্খের কাজ, যে বিকৃত কামের অধিকারী সেই ব্যক্তি সমাজের গায়ে একটা ঘা’য়ের মতই, নারী জাতির অবমাননাকারী প্রত্যেক মানুষ এই বিকৃত কামের অধিকারী ) , তাদের নিয়ে টানাটানি বাড়তে থাকে, নাচের রঙ্গে নেশা ধরাতে নাচনিয়ার দল যে পিঠের বেশি ভাগ খোলা ‘চোলি’ পড়ে থাকে সেই উম্মুক্ত পিঠে পড়তে থাকে পুরুষের হাত, ‘বন্ডেজ’প্রিয় বারাতির ব্লেড ছিন্ন ভিন্ন করে নাচনিয়া লওণ্ডার দেহ, রক্তে – স্বেদে দুর্দমনীয় পৌরুষ এর পরে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায় লওণ্ডা নাচের নায়িকাদের (নায়ক!!!)। এক নয়, দুই নয় বেশি ভাগ ক্ষেত্রে ১২-১৪ জনের হাতে ধর্ষিত হতে হয়েছে বলেই গড়পড়তা হিসাব মেলে।
তবে শুধু বারাতির বরাত নিয়ে নাচা নয়, কিছু ক্ষেত্রে মেলায়, অনুষ্ঠানে নাচার জন্যেও নাচনিয়াদের ব্যবস্থা করা হয়। নাচনিয়া খোলির মালিক এসব ব্যাপার দেখে থাকেন। আবার অনেক সময় রহিস জমিনদার দের বাড়িতে পাকাপাকি নাচনিয়াকে ক্রীতদাসের (ক্রীতদাসী!!!) মত রাখা হয়। ক্রীতদাস বলা বোধ হয় ভুল হবে, বলা যেতে পারে যৌনদাস হিসাবে। সেখানে কিছুটা খেতে পাবার জন্য বার বার তাকে ধর্ষিত হতে হয় জমিনদার, তার পরিজন, চাকর এদের হাতে; এমনকি প্রাতক্রিয়া সারতে মাঠে গেলেও শিকার হতে হয় এদের। কি অদ্ভুত লাগছে না! তার থেকেও বেশি গা – শিউরে ওঠা ভাব আসছে না! কিন্তু কিছু করার নেই লওণ্ডা নাচের নায়ক (!!!)দের। শেষ অব্দি বেশি ভাগ ক্ষেত্রে কোন দুরারোগ্য যৌন ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে স্থান হয় রাস্তার ধারে, জীবনের শেষের ওখানেই শুরু হয়।
ঋণস্বীকারঃ 
১. গুরুচণ্ডালী ওয়েবম্যাগ
২. ‘চন্দ্রগ্রহণ’ পত্রিকার ১৪২১ শারদ সংখ্যা
৩. ইন্টারনেট থেকে নানা সংকলিত তথ্য
৪. নিজস্ব গদাসম দৃষ্টিভঙ্গী

Tuesday 23 June 2015

পুস্তক পর্যালোচনা ~অরিন্দম চক্রবর্তী




অরিন্দম চক্রবর্তীর পুস্তক পর্যালোচনা:-
নাম : অন্য থেকে ভিন্ন
লেখক : রঞ্জন বন্ধ্যোপাধ্যায়
প্রকাশকঃ সাহিত্যম
প্রিয়,
লিজা।আজ মনে পড়ছে সেই জ্যোৎস্না ভেজা রাতের কথা।যেদিন তোমার আমার শরীর জেগে উঠেছিল অন্তহীন ভালবাসায়।
কদিন ধরেই আমার মধ্যে পেয়ে বসেছিল মৃত্যুচেতনা।ভাবছিলাম কী হবে বেঁচে থেকে এই "অপ্রণয়"ভরা সংসারে।কাজকর্মের জটিল নাগপাশ আর অন্তহীন নির্লজ্জতা বারবার চেতনায় আনছিল 'বিপন্ন বিস্ময়'এর মরা সোঁতা।ঠিক তখনই তোমার টেক্সট মেসেজ।আমার চেতনার শিরায় ধরালো স্ফুলিঙ্গ।সেদিন টা ছিল পূর্ণিমা।দামিনীর মত ভাবছিলাম এমন দিনেই মরতে চাই হঠাত ই মোড় ঘুরল।জীবনের আরো একটু বাঁকে মধুলোভীর মত তোমার বাড়ির সামনে গাড়িটা থামালাম।
তুমি সেদিন পরেছিলে সাদা নাইটি।স্বচ্ছ ভেজা আবরণের মধ্যে দিয়ে তোমার দেহের উপত্যকা গুলো আমার শরীর মনে জেগে আনলে ঝড়।সাদা জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যাচ্ছে চারপাশ।মনে পড়ছে এমন চন্দ্রালোকিত রাতের সৌন্দর্য দেখেই কবি রবীন্দ্রনাথ ভুলেছিলেন পুত্রশোকের নিদারুণ আর্তি।জীবনের টান এমন ই কী বিচিত্র!!!
সেদিন তুমি সরাসরি মেলে ধরলে নিজেকে।তোমার গোলাপি অন্তরবাসে যেন কবিতার মায়াঞ্জন।তোমার নেত্রছায়ার কালো নজরটানে আমি বিদ্ধ হলাম।ধীরে ধীরে পোশাক উন্মোচন যেন লাল পদ্মের পাপড়ি উন্মোচন।ঠিক এভাবেই কী পার্বতী পদ্মের কোরক কে উন্মুচিত করেছিল কুমারসম্ভবে??
তোমার নগ্ন শরীরের উথ্থানপতন আমাকে মনে পড়ালো নেরুদার প্রেমের আর্তি:::
"From your hips to your feet
I want to make a long journey.
I am smaller than an insect.
I go along these hills,
they are the colour of oats,
they have slender tracks
that only I know....

Here is a mountain.
I'll never get out of it.
Oh what giant moss!
And a crater,a rose
of dampened fire!"

সত্যিই তাই একটুও বাড়িয়ে বলছিনা।তোমার বিভাজিকার পরশ,ফুলের পাপড়ির মত বর্তুল স্তনবৃন্ত আর ভেজা গহ্বরের অমোঘ আকর্ষণ আমায় পাগল করে তুললে।গাঢ় চকোর মিশ্রণ তোমার সারা গায়ে ফেলে সেগুলো পরম মমতায় লেহন করতে লাগলাম।এক বন্য ফুলের সুগন্ধ পেতে লাগলাম আমি।আমার নগ্ন শরীর ক্রমশ তোমার সঙ্গে এক হতে লাগল।চাঁদের আলোর শিহরণ ঘাম চকো আর বীর্যের ককটেলে শোভিত হয়ে উঠল আমাদের মিলন লগ্ন তোমার স্টাডি।মনে হল আমি যেন স্বর্গের সেই অলকা পুরীতে রয়েছি।মৃত্যুর পাশ কেটে জীবনের এমন আততি আমায় ত্রাণ করতে লাগল।
সেই স্বর্গীয় অনুভূতির পরে যখন জীবন টাকে মনে হচ্ছে গলানো মোমের মত ঠিক তখনি তুমি আমায় এই বইটা এনে দিলে।এর প্রতিটা পাতায় তোমার সিডাকশনের মায়া আর ছেনালি ছড়ানো।
আজ আমি তোমার থেকে অনেক দূরে এই বইটা সবে শেষ করলাম।সত্যিই যৌনতার এমন বর্ণিল মহোৎসব তুমি আর রঞ্জন বাবু ই পারেন।এই বইয়ের এক একটি লেখা যেন তোমার পোশাক খোলার অদ্ভুত দুষ্টুমি।প্রতিটি শব্দ যেন তোমার নিরাবরণের ভাষা।এক একটা কাহিনিতে রয়েছে তোমার লাল বা গোলাপি অন্তর্বাসের সুবাস।তাই তো তোমার থেকে এত দূরে থেকেও এই বইয়ের গন্ধ যেন তোমার কথাই মনে পড়াচ্ছে।এই বইয়ের কুশীলবরা সবাই শরীরকে ভালবাসে সে পদ্মিণী থেকে রাজপুত কন্যা থেকে বিল ক্লিন্টন থেকে কেনেডি সবাই।লাবণ্য র শরীর ভাষা বুঝতে পারেনি অমিত।কিন্তু আমি বুঝেছি শরীরের ভালবাসার তন্ময়তাই পারে হিরণ্ময় জীবনের স্বাদ এনে দিতে।যেমন তুমি সেদিন মৃত্যুর পথ থেকে মোড় ঘুরিয়েছিলে জীবনের দিকে।আমি তো শেষ হতেই বসেছিলুম।কিন্তু তোমার আশ্লেষ আর এ বইয়ের প্রাণন আমায় বাঁচিয়ে রাখবে অনেকদিন।
হয়ত এরপরে অনেকের সঙ্গেই তোমার শরীরের সংযোগ ঘটবে কিন্তু তবুও ইয়েটসের কথা ধরে বলব:::"তোমার জীবনে অনেক পুরুষই আসবে।তারা তোমাকে ভালবাসবে।কিন্তু মনে রেখো,শুধুমাত্র একজনই ভালোবেসেছিল তোমার তীর্থযাত্রী আত্মাকে।"::::

Monday 22 June 2015

পুস্তক পর্যালোচনা ~ রূদ্র সেন-

পুস্তক পর্যালোচনা ~ রূদ্র সেন-
The murder of Tutankhamen
Bob Brier, Ph.D.
Berkley Books, New York,
Price: ₹850/-
সুরম্য প্রাসাদে বিশ্রামরত এক কিশোর সম্রাট। স্তিমিত প্রদীপের নরম আলো যেন তাঁকে আরামের ঘুমের কোলে ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ যেন একটা ছন্দপতন হল, ঘরে যেন কার পদচারণের শব্দ! উঠে দেখতেই মাথার পেছনে একটা ছুঁচালো অস্ত্রের আঘাত আর তীব্র রক্তপাত। ততক্ষনে অবশ্য আততায়ী পলায়ন করেছে কিন্তু সম্রাটের চিৎকারে ছুটে এসেছে তাঁর প্রিয়তমা রানী আর রক্ষীরা। তারপরে কয়েকদিনে সেরা চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে ব্যর্থ করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর পরে ঢলে পড়া। এই ছিল সেই হতভাগ্য কিশোরের ভাগ্যে, এক মর্মান্তিক মৃত্যু।

নতুন করে বলতে নিশ্চই হবে না, সেই কিশোর কে আর কে ই বা হল তাঁর প্রিয়তমা মহিষী। তাঁরা হলেন ফারাও তুতানখামুন আর রানী অ্যানকাসানামুন। এভাবেই প্রায় ৩,৫০০ বছর পরে সেই প্রাচীন হত্যাকাণ্ডের (?) সমাধান করতে নেমে বব ব্রায়ার বিভিন্ন ঘটনা সাজিয়েছেন। যদিও মৃত্যুর পরের ঘটনা আরো চাঞ্চল্যকর। রানী অ্যানকাসানামুন বুঝতে পেরেছিলেন হত্যা কাদের চক্রান্তে সংগঠিত হয়েছে তাই তিনি অবিশ্বাস্যভাবে মিশরীয়দের প্রাচীন শত্রু হিটাইট সম্রাটকে গোপন চিঠি পাঠালেন তার কোন রাজকুমারকে পাঠাতে, যেন অ্যানকাসানামুন তাকে বিয়ে করে মিশরের নতুন ফ্যারাওয়ের রানী হতে পারেন। এই চিঠি বর্তমান তুরস্কের রাজঅন্দরে আলোড়ন তুলেছিল, যে মিশরকে তারা কিছুতেই দখল করতে পারেনি, সেখান থেকে এমন প্রস্তাব! 

যদিও অ্যানকাসানামুনের এই আবেদন ছিল কাতর, পেছনে ছিল না কোন খারাপ অভিসন্ধি। সে শুধু চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রী আঈ য়ের স্ত্রী হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে। ততদিনে তুতানখামুনের কোন সন্তানের জন্ম হয়নি তাই মৃত ফ্যারাওয়ের রানীকে বিবাহ করলেই নতুন ফ্যারাও হওয়া যাবে। কিন্তু রাজরক্তের অধিকারী নয় এমন কোন পুরুষকে তিনি বিবাহ করতে চান নি, তাই শত্রুর কাছে পাঠিয়েছিলেন এমন অদ্ভুত প্রস্তাব। যদিও প্রস্তাবে সাড়া দিতে আসা রাজকুমারকে পথে হত্যা করা হয়েছিল। 

এমন অদ্ভুত কিছু প্রাচীন ঘটনা আর প্রধানমন্ত্রী আঈ ও সেনাপতি হরেমহেবের চক্রান্তের শিকার এই রাজযুগলের মৃত্যু এবং পরিকল্পিতভাবে তুতানখামুনকে ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টার কাহিনী নিয়ে এই বই। 

যদিও ১৯২২ এ তুতানখামুনকে খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু তাঁর রানী অ্যানকাসানামুন ছিল তখনও অধরা। প্রখ্যাত ঈজিপ্টোলজিস্ট বব ব্রায়ার জটিল সেই রাজনৈতিক সমীকরন যার জন্য খুন হতে হয়েছিল সেই এই কিশোর ফ্যারাওকে আর মৃত্যুপরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাকে গোয়েন্দার মতো সমাধান করেছেন প্রায় ৩,৫০০ বছর পরে আর শেষে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন গোয়েন্দার কখনও পক্ষ নেওয়া উচিত নয় কিন্তু এই কিশোরকে তিনি ভালবেসে ফেলেছিলেন। তাই সেই ভালবাসা সব বাধাকে অতিক্রম করে মনে হয় সেই হতভাগ্য ফ্যারাওকে তাঁর হত্যার প্রকৃত হত্যকারীকে চেনাতে পেরেছেন প্রায় ৩০ শতাব্দী পরে।।