Monday 6 July 2015

ছোটগল্প ~ ঋজু পাল

শেষ থেকে শুরু 
ঋজু পাল :~

    সকালে বাড়ি ফিরলাম , শরীর টা বড্ড দুর্বল এখনো । তিন দিন হসপিটাল এর বিছানাতে কাটানোর পর আজ নিজের চেনা পরিবেশে ফিরতে খুব ভালো লাগছে । বাড়ির পরিবেশ এখনো থমথমে । বউদি পর্যন্ত কেঁদে কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছে । বাবা সেই যে ট্যাক্সি থেকে আমায় নামিয়ে ঘরে নিয়ে এল , তারপর থেকে আর দেখতে পাচ্ছি না । মা বোধহয় ঠাকুর ঘরে , যমের মুখ থেকে ছেলে ফিরে এসেছে ,ঠাকুরের প্রাপ্য ধন্যবাদ টুকু দিতে গেছে ! আর আমি? খোলা জানলা দিয়ে চারপাশের আলো ঝলমলে আকাশ তাকে দেখছি, সত্যি ই কি কোন দরকার ছিল ওরকম একটা পদক্ষেপ নেওয়ার ? জানি না। 
হটাত আমার সাত বছরের পুচকু ভাইপো এসে বলে ফেলল ; কাকু তুমি আর যাবে না তো আমায় ছেড়ে ? তাহলে আমায় ঘুরতে কে নিয়ে যাবে ? বাবা র মত তুমিও স্টার হয়ে.........।
ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম , না সোনা ,কোথাও যাবো না আমি । প্রমিস করলাম।
নাহ , এত ভালবাসা কে অগ্রাহ্য করার মত দুঃসাহস আমার নেই । নতুন জীবন শুরু করতে আমায় হবেই , পুরনো ডায়েরি গুলো কি করবো , ফেলে দেব ? স্মৃতি আঁকড়ে বসে থেকে কোন লাভ নেই ।
এই তো সেদিনের কথা , TCS এর ক্যাম্পাস প্লেসমেন্ট চলছে । দুটো ধাপ টপকে দুরু দুরু বক্ষে অপেক্ষা করছি শেষ ধাপের জন্য। মনে হচ্ছে পারবো না ,হবে না। মোবাইল টা বন্ধ করতে গিয়ে একটা মেসেজ চোখে পড়ল , All the best dear ! u have 2 do it smile emoticon 
মুহূর্তেই হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম । তারপর ? ...............
----হ্যালো , রাহুল দা , selected !!!!!!!!!! 
---জানতাম এটাই হবে । Heartiest congratulations !!!! যা বাড়ি যা , রাতে ফোন করছি ।
এই হল রাহুল দা , আনন্দে টগবগ করলেও বাইরে থেকে বোঝা যায় না । দেখতে দেখতে দুবছর হয়ে গেল ,we r in a relationship ! আমাদের আলাপ Rainbow Pride Fest walk এ ।নিছক বন্ধুত্ব , তারপর একটু একটু ভাল লাগা , অতঃপর ভালবাসা । আজ চেন্নাই তে থাকলেও প্রতিদিন যোগাযোগ রাখা , কথা বলা কোনটাতেই খামতি নেই ।
মা খুব রাগারাগি করেছিল, বউদি ও , কলকাতা ছেড়ে চেন্নাই কেন যাচ্ছি । মা কে কোনমতে বুঝিয়েছিলাম , চাপ এর কি আছে , রাহুল দা আছে তো , এক অফিস , এক এপার্টমেন্ট , কোন অসুবিধা হবে না।
বাড়িতে সবাই জানে ,রাহুল দা আমার খুব প্রিয় বন্ধু , কিন্তু ওই টুকুই । তার বেশি কিছু বলার মত সৎসাহস আমার ছিল না ।
তারপর আর কি , চেন্নাই তে পা দেওয়া , একে নতুন জীবন , তারপর নিজের ভালবাসার মানুষের সঙ্গে একসাথে থাকতে পারার আনন্দ যে কতটা হতে পারে , সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এক সাথে অফিস যাওয়া, ফেরার সময় ঘুরে ফিরে ফ্ল্যাটে আসা , রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা , আর অনেক টা ভালবাসা !
সব তো ঠিকই চলছিলো , তবু কেন এমন হল ... রাহুল দা র বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য জোর করা , অপ্রত্যাশিত ভাবে ওর রাজি হওয়া, নিজের একটা আলাদা এপার্টমেন্ট খুঁজে নিতে অনুরোধ করা , আমার কান্নায় ভেঙে পরা ..................সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল !
কটা ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলাম ঠিক মনে নেই , তবে এটুকু খেয়াল আছে বাড়ির আর অফিস এর অনেককেই হসপিটাল এ দেখতে পেলেও , একজন কে পাই নি । আমার অভস্ত্য চোখ শুধু খুঁজে বেরিয়েছে তাকে , একসময় ক্লান্ত হয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে ।
বাবু , তোর একটা চিঠি এসেছে , এদিকে আসতে পারবি ? বউদি র গলা শুনে চমকে উঠলাম । নিজের অজান্তেই কখন অতীতে ফিরে গেছিলাম।
সই করে চিঠি টা নিয়ে দেখি , Tech Mahindra র অফার লেটার ! কবে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম আর আজ এল ,পোস্টিং কোলকাতা তেই ।
কার চিঠি রে ? মা এগিয়ে এল ।
মা , আমি TCS ছেড়ে ভুল করি নি , আমি রাস্তা খুঁজে পেয়েছি । এবার নতুন করে সব শুরু করব ,শুধু তোমাদের জন্য !
হার সৌরভ কোনদিন মানে নি , মানবেও না।

3 comments: