Saturday 20 June 2015

|| অপরাহ্ন || ~ স্পর্শের বাইরে

                      



আমি সাধারণত সামাজিক,অভিজ্ঞতালব্ধ গল্প লেখার চেষ্টা করি। কাল রাতে অলৌকিক গল্প লিখতে গিয়ে দেখলাম,, ব্যাপারটা বেশ কঠিন !
|| অপরাহ্ন ||
_______________

আমার ডাক নাম শর্মি। তবে ও আমাকে 'সু' বলে ডাকতো।
কি সুন্দর এক অক্ষরের মিষ্টি নাম না ! মাঝে মাঝে ও যখন আমাকে সু বলে ডাকতো,তখন মনে হত এর থেকে ভাল এক অক্ষরের নাম হয়ত পৃথিবীতে আর একটাও নেই।
আমি যখন পার্কে বা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতাম,তখন ও পেছন থেকে এসে হঠাত করে আমার কোমর জড়িয়ে ধরতো। কোন তরুনীকে যদি হঠাত তার প্রেমিক ভালোবেসে চুপিচুপি পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে,,তখন সে খুব তৃপ্তি পায়। ওর এই পাগলামিতে আমিও ভিষন খুশি হতাম। মনে মনে খিলখিল করে হেসে উঠতাম। কিন্তু ওকে বুঝতে দিতাম না। গম্ভীর গলায় বলতাম - "রাস্তাঘাটে এসব অসভ্যতা আমি পছন্দ করি না"।
ওর মুখটা যখন করুন হয়ে যেত,,আমি তখন হেসে হেসে ওর মাথার একঝাক চুল এলোমেলো করে দেবার চেষ্টা করতাম। কিন্তু সবসময় পারতাম না। ও খুব লম্বা ছিল।
বিকেলের এই সময়টা আমার খুব ভাল লাগে। সূর্য মাথা নুইয়ে নেয়,এদিকে অন্ধকারের ছিটেফোঁটাও থাকে না। এই সময়টাকে খুব সুন্দর ভাষায় কি যেন বলে?? অপরাহ্ন।
আচ্ছা আপনি কখনো ঠকেছেন?? ভালোবাসায় ঠকেছেন?? আপনার কাছের মানুষ'টা যার সাথে সারাটা জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন,,সে হঠাত করে আপনাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে দূরে সরিয়ে দিয়েছে??? তখন ঠিক কিরকম অনুভব করেন???
ভিষন রেগে যান?
কান্নাকাটি করে সারাক্ষন নিরবে গাল ভিজিয়ে রাখেন?
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে তার কথাগুলো মনে পড়ে আর ঘুম আসতে চায় না?
তার পুরোনো ছবি'গুলি নষ্ট করেও স্মৃতির আয়নায় বারবার সাজিয়ে রাখেন?
তাকে অন্য কারও জীবনে জড়িয়ে পড়তে দেখে মনে মনে দির্ঘনিশ্বাস ফেলেন বলেন,,'আমি আজও তোমায় ভালোবাসি'?
আর তারপর বুক দাপড়িয়ে নিজেকে সান্তনা দিয়ে বলেন,,'এখনও অনেকদিন পড়ে আছে'?
তারপর একসময় স্মৃতিপট গুলো মনের খুব গভিরে ধামাচাপা দিয়ে ভব্যিষতের জন্য প্রস্তুতি নেন?
এর মধ্যে কোনটা? যেটাই হোক,আপনি নিজেও জানেন না এই পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের থেকে আপনি অনেক ভালো আছেন। অনেক সুখে আছেন।
আজ বিকেলে আমার এই ছোট্ট এককামড়ার ঘর'টায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাত করে খাটের কোনায় এই ডায়েরি'টা চোখে পড়লো। আমি ক্লাস ১২ অবধি পড়েছি। লেখাপড়া জানি। তাই ডায়েরি পৃষ্টা উল্টিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছা করলো। আমি কোনোদিনও সেভাবে কিছু লিখিনি,তাই আমার কাছে ইচ্ছাটা খুব লজ্জার। ঠিক যেমন ১৪ বছরের কিশোর ঠোটের উপর কালো রেখার অস্তিত্ব দেখে লজ্জা অনুভব করে।
আমি খুব দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। আমরা ৫ বোন। কোন ভাই নেই যে ভবিষ্যতে বাবার শিরদাঁড়া'র অবলম্বন হয়ে উঠবে। বাবা হাড়-ভাঙা খাটুনি খেটে আমাদের মানুষ করেছে।
আমি তখন আমার জীবনের প্রথম প্রেমে পড়ার আনন্দে মশগুল। ছেলেটাকে প্রথম দেখায় কিভাবে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম জানিনা।
একদিন হঠাত বাড়ি থেকে পালাম। যদিও পালানোর কোন প্রয়োজন ছিল না। বাবা-মা'র ঘাড় থেকে একটা মেয়ে নেমে গেল ভেবে হয়ত এমনিই ছেড়ে দিত। তবুও 'ও' বললো হঠাত করে বিয়ে সেরে ফেলতে।
যাকে মন থেকে বিশ্বাস করে ভালোবাসা যায়,তার হাতে হাত রেখে মৃত্যুকে পর্যন্ত আপন করে নেওয়া যায়। সেই জায়গা থেকে পালানো'টা তো সামান্য কিছু।
আমার ভেজা ঠোটের দিকে তাকিয়ে 'ও'র চোখ দুটো যখন ঝিকমিক করে উঠতো,তখন নিজেকে এই পৃথিবীর সবথেকে সুখি নারী বলে মনে হত।
জীবনের প্রথম চুম্বন কেউ ভোলেনা।
আমার আজও একটু একটু মনে পড়ে। ও'র সেই শরীরের ঘ্রান,উদ্দিপনা,ঘামে ভেজা চকচকে সুঠাম দেহ আমাকে মাতাল করে তুলতো। মাঝেমাঝে এই পুরুষ'টা একমাত্র আমার ভেবে নিজেকে কি ভিষন সৌভাগ্যবতী মনে হত!
দুজনে মিলে একদিন ঠিক করলাম,,একদিন স্বামী স্ত্রী হয়ে বাড়িতে গিয়ে বাবা-মা'র কাছে ক্ষমা চাইবো। তিন বোনের জন্য চুড়িদার,বড়'দি আর মায়ের জন্য দুটো ভাল তাঁতের শাড়ি,,,আর বাবার জন্য একটা নতুন দামী টেপরেকর্ডার কিনে নিয়ে যাব।
আমার বাবা খুব ভালো গান গাইতে পারে। সব তার নিজস্ব গান।
ছোটবেলায় আমরা ৫ বোন জেগে থাকতাম। রাতে খাওয়ার পর কখন বাবা কাঁঠাল গাছের তলায় শোয়ানো ভাঙা চৌকিটায় বসে গান ধরবে।
বাবা'র কোন গানের কথা মনে না থাকলেও সুর'গুলি আজও আমার মনে আছে। সুর লেখার উপায় জানা থাকলে আপনাদের লিখে শোনাতাম।
নতুন টেপরেকর্ডারের একটা সখ বাবা'র অনেকদিনের। যেটায় বাবা নিজের গান'গুলি ধরে রাখতে পারবে। আমাদের প্রত্যেকদিনের খাবারের চাহিদা'র কাছে সেই সখ কোনদিনও অম্লান হতে পারেনি।
ও যখন দীঘা'য় হানিমুনের কথা বললো তখন মন'টা আনন্দে মেতে উঠেছিল। মনে হচ্ছিল,আমি এত সুখি কেন? দীঘা'য় আসার আগে দুজনে মিলে কেনাকেটা করতে বেড়িয়েছিলাম। মনে আছে সেদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল। ও ভালোবেসে আমাকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি কিনে দিয়েছিল। জিনিস'টার দাম সামান্য হলেও মনে হয়েছিল,এর থেলে মূল্যবান কোন উপহার কি এই পৃথিবী'তে আর একটাও হতে পারে!! বাদবাকি কেনাকাটা দীঘা'র জন্য রেখে দিয়েছিলাম,ঠিক যেমন ভালোবাসা'টুকু তুলে রেখেছিলাম সমুদ্রের ঢেউ এর জন্য।
ওর দেওয়া সেই লাল শাড়ি পরেই আমি জীবনে প্রথম ধর্ষিত হই।
হঠাত একদিন নিজেকে আবিষ্কার করি এই এককামড়ার ঘরে। ভালোবাসার আনন্দ প্রথম নথ ভাঙার প্রচন্ড কষ্টের কাছে হার মেনেছিল। দু'পা ভেষে গিয়েছিল রক্তে।
প্রথমে অনেক চিতকার করে বাইরের জগতের কাছে নিজের অস্তিত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। দু'দিন পরে বুঝলাম আমি নরকে এসে পড়েছি। এখানকার জগত বিষাক্ত ভালোবাসায় ভর্তি।
আমাকে সবসময় দরজা বন্ধ করে রাখা হত। এখনও হয়। আমি প্রচন্ড ভয়ে গুমরে থাকতাম। প্রথম প্রথম দরজা খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারিনি। পরে নিজেই ভয়ে থাকতাম যেন এই ঘরের দরজা কখনো না খোলে,,কারন দরজা খোলার সাথে সাথেই এক একজন করে উন্মত্ত,হিংশ্র পশু এই ঘরে ঢুকতো। ওরাও 'পুরুষ' এবং 'মানুষ' শ্রেনীর মধ্যে পড়ে। আমি অনেক ক্ষুদার্ত হায়েনা'র সামনে একদলা মাংশপিন্ড হয়ে উঠলাম।
যে ভালোবাসার জন্য একসময় ঘর ছেড়েছিলাম,,তারপর থেকে সেই ভালোবাসার ভয়েই এ ঘরে আটকা পড়ে রইলাম।
প্রথম দু'মাস দুরন্ত কষ্টের পরে একসময় যেন নিজের থেকেই মানিয়ে নিলাম। গলার থেকে নিচের অংশের কোন গুরুত্ব আমার কাছে রইল না। আমি তখনও বুঝিনি আমি এ ঘরে কিভাবে এলাম।
আমার এ ঘরে একটা জানালা ছিল। জং ধরা লোহা'র শক্ত জানালা। নাজানি কতদিন খোলা হয়নি। বহুদিনের প্রচন্ড চেষ্টার পর একদিন সেই জানালা খুললাম। আমার ঘরে প্রায় তিন'মাস পরে সূর্যের আলো এসে পড়লো। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আমার ঘর'টা দোতলায়। নিচে কতো কতো মেয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হায়েনা'দের সাথে দর কষাকষি করছে। আমি বুঝতে পারলাম,আমি কোথায় এসে পড়েছি। আরও দু'দিন পর বুঝতে পারলাম,আমাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এই পৃথিবীতে সবজায়গায় একটা নির্দিষ্ট বাজার থাকে,,যেখানে নারী'রা বিক্রি হয়,, পুরুষ'রা কিছু সময়ের জন্য কেনে,সভ্যতা...সভ্যতার মত এগিয়ে যায় আমাদের মত কিছু কিছু মানুষ'কে অসভ্য তকমা'য় ভূষিত করে।
জানালা থেকে সেদিন ওকে দেখেছিলাম। আমার সেই প্রানের পুরুষ। সেই একমাথা ঝাঁকানো চুল নিয়ে নিচে দাঁড়িয়ে বয়স্ক একজন মহিলা'র সাথে কথা বলছে।
হঠাতই আমার সাথে ওর চোখাচোখি হল। ও কিছুটা ঘাবরে গেল। মুখটা থতমত হয়ে গেল। আমার দিকে আর না তাঁকিয়ে তাড়াতাড়ি অন্যদিকে চলে গেল। ঠিক যেন পালিয়ে গেল।
কিজানি কেন ও'র ওপর আমার বিন্দুমাত্র রাগ হলো না। অথচ সেটাই হবার কথা ছিল। ইচ্ছা করছিল ওর থতমত করুন মুখের উপরের সেই একঝাক চুল ঘেঁটে এলোমেলো করে দি। কিন্তু পারতাম কি? ও যে ভিষন লম্বা!
কিন্তু রাগ আমার হলো। হলো কিছুদিন পর। ও'কে আমি ভিষন ভালোবেসে ছিলাম। ও আমাকে প্রত্যাক্ষান করতে পারতো। নাজানিয়ে অজ্ঞানবস্থায় এই বেশ্যালয়ে বিক্রি কেন করে দিল?? কত টাকা পেয়েছিল তাতে 'ও'? আমার ভালোবাসাস মূল্য দিয়ে সেই দাম মাপা গেলে,,,একবার মেপে দেখতাম।
আমি সারাদিন এই ঘরে খাটের উপর শুয়ে থাকতাম। এখনও থাকি। পশুগুলো যখন আমার দেহের উপর উন্মত্ত হয়ে উঠত,আমি উপরে ঘুরন্ত ফ্যান'টার দিকে একদৃষ্টে তাঁকিয়ে থাকতাম। ফ্যান'টা ঘুরতে ঘুরতে একসময় যেন হলুদ হয়ে যেত। কাঁদতে কাঁদতে একসময় যেমন মানুষের চোখের জল অজান্তে হলুদ হয়ে ওঠে। ফ্যান'টা সারাদিন ঘুরতো। যেন হাওয়া দিয়ে আমার সব বেদনা,কষ্ট উড়িয়ে নিতে চাইছে। ফ্যান'টাকে আমি ভালোবেসে ফেললাম।
একদিন জানালা'র শিঁক ভেঙে একটা চাকু'র মত বানালাম। তারপর জিনিস'টাকে খাটের পায়া'র একটা গর্তে লুকিয়ে রাখলাম।
যদি কখনো আমার সেই প্রানের পুরুষ আমার এই ঘরে আসে,ওর একঝাক চুলের মধ্যে ওটা পুঁতে দিয়ে বোঝাবো,,ওর মতো আমিও ভালোবাসতে পারি।
হ্যাঁ একদিন 'ও' আসলো। একদিন বিকেল। বহুদিন পর। জানিনা হয়ত ভুল করেই আমার ঘরে ঢুকে গিয়েছিল। ওকে দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম,,,,ও অনেকটা ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে ইতস্তত করছিল।
আমি ওকে সে সুযোগ না দিয়ে আপন করে নিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম কেমন আছো?? বেঁচারা উত্তর দিতে পারেনি। হয়ত অবরাধ বোধে ভুগছিল।
ওকে কাছে টেনে নিয়ে আমরা আবার মিলিত হলাম।
একসময় ও যখন ক্লান্ত হয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,আমি ধীরে ধীরে খাঁট থেকে নামলাম। খাঁটের পায়ায় লুকিয়ে রাখা চাকু'টা বার করলাম। তারপর উঠে আসলাম উপরে। ওর একঝাক চুলের মধ্যে ওটা সজোরে আঘাত করতে প্রস্তুত হলাম।।
নাহ!! পারলাম না। আমি হেরে গেলাম। ভালোবাসার মানুষ যতই দুরে ঠেলে দিক না কেন! হয়ত তার উপর রাগ হয়,,,কিন্তু চেষ্টা করলেও তাঁকে কষ্ট দেওয়া যায় না। শুধু নিরব কিছু অভিমান বুঁকের ভিতরে আটকে থাকে,,যা সে কখনো ভাঙাতে আসে না।
লোহা'র চাকু'টা আবার আগের জায়গায় রেখে দিলাম।।
এখন আমি মাঝে মাঝে বাইরে বের হতে পারি। দিনের বেলা এরা বেড়াতে দেয় না। বিকেলের পর থেকে নিয়ম কিছুটা শিথিল হতে থাকে। বিকেলে যখন লাইন দিয়ে আমার বয়সী মেয়েগুলিকে রোজগারের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি,তখন খুব মায়া হয়। আর রাতে যখন দেখি সারাদিনের রোজগারের টাকা দিয়ে বেশ আরাম করে, হাঁটু মুড়ে আসন করে বসে গ্রাস পাকিয়ে ধবধবে সাদা ভাত খাচ্ছে,তখন সেই দৃশ্যটাকে কোন অচেনা শিল্পির জল রঙে অাঁকা পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরতম চিত্র বলে মনে হয়।
এক মিনিটটট!!
কে যেন আসছে। হ্যাঁ মনে হয় এই ঘরের দিকেই। হয়ত আবার এক উন্মত্ত পুরুষ আসছে মাংসের লোভে। প্রায়ই মনে হয় এদের বাড়িতেও আমার মতো দিদি,বোন বা মেয়ে আছে,,ওই দু'টি কালো চোখে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য এরা খুঁজে পায়না কেন??? এখন নিজেকে সত্যিকারের মানুষের থেকে ভূত বলে বেশি ভ্রম হয়।
আওয়াজ'টা প্রায় ঘরের সামনে এসে পড়েছে। আমাকে থামতে হবে..............
অনেকদিনের বন্ধ দরজা'টা হঠাত বিকট শব্দ করে খুলে গেল। তার ভিতরে ছুড়ে ফেলা হল এক উনিশ-কুড়ি বছরের মেয়েকে।
প্রচন্ড ঝড়ের পর গাছপালা'গুলোর যে অবস্থা হয়,তার সাথে এই মুহূর্তে মেয়েটার মুখের বেশ মিল পাওয়া যাচ্ছে। সাথে বেশ সুপুরুষ প্রায় ২৬-২৭ বছরের একটি যুবকও ঘরের ভিতরে ঢুকলো।
মেয়েটা কাকুতিমিনতি করছে.......
- প্লিজ আমাকে যেতে দাও। আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম,ভালোবেসেছিলাম। আমার সাথে এরকম কেন করছ?
- ভালো তো আমি এখনও তোমাকে বাসি সোনা। শুধু তোমার ওই ভালোবাসা'টুকু আরওও অনেকের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে।
- ছি:! লজ্জা করে না তোমার?
- লজ্জা আবার কি?? খায় না মাথায় দেয়। বেশি চাপ নিও না ডার্লিং। তোমার লজ্জা কমানোর দায়িত্ব আজ থেকে আমি নিলাম। আজ থেকে তোমার নাম রুমি নয়,,রঙ্গিলা। হে হে হে..........
- প্লিজ আমাকে যেতে দাও। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। আমি ছাড়া আমার মা বাবা'র আর কেউ নেই।
- অবশ্যই যেতে দেব সোনা। এই মুহূর্তে তুমি ছাড়াও আমার আর কেউ নেই। দুবছর ওয়েট করো। টাকা'টুকু ভালোভাবে উসুল হোক। তোমার শরীরের দাম কত জান! অনেকেকেকক! তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। তোমার তো ডার্লিং গর্ব হওয়া উচিত।
- শয়তান,,জানোয়ার,,ইতর! তুই কতদিন আটকে রাখবি? একদিন ঠিক বেড়াবো! তখন তোকে খুন করে নিজে মড়বো দেখে নিস!
- তাই নাকিইইইইই?? খুব সখ? বেড়ানোর কথা কল্পনাতেও এনো না। হাজার চিতকার করলেও এই ঘর থেকে কেউ বেড়াতে পারে না। এর আগে একজন ছিল। অনেক চেষ্টা করেও বের হতে পারেনি। শেষে উপরে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিল। তবে ততদিনে মার্কেট ভ্যালু উসুল হয়ে গিয়েছিল। তারপর উপরের ওই ফ্যান'টাও খুলে নেওয়া হয়।
যা হোক,শেষবারের মত তোমাকে একটু ভোগ করে নি। কাছে এস রঙ্গিলা.......
মেয়েটা ছিটকে এসে যুবক'টার গালে একটা চড় মারল।
- তবে রে! এত বড় সাহস!.........
মেয়েটার পেটে এক লাথি মেরে খাঁটের পাশে মেঝের উপর শুইয়ে দেয় যুবক'টি। তারপর চুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে মেয়েটার প্রতি ক্রমশ হিংশ্র হয়ে উঠতে থাকে।
মেয়ে'টা নিজেকে বাঁচানোর প্রানপন চেষ্টা করে,কিন্তু বারবার বার্থ হয়। ততক্ষণে যুবক'টি মেয়েটির শরীরের উপর চড়ে বসেছে।
মেয়েটি ঠিক যে মুহূর্তে আস্তে আস্তে শিথিল হতে থাকে,,,তখনই তার কানে কে যেন ফিসফিস করে বলে ওঠে 'পাশে,খাঁটের পায়ার ধারে হাত দাও'। প্রথমে মেয়েটি কিছু বুঝতে না পারলেও পরে আবার একই শব্দ ফিসফিস করে করে উচ্চারিত হতে থাকে... পাশে,খাঁটের পায়ার ধারে হাত দাও'.... পাশে,খাঁটের পায়ার ধারে হাত দাও' ... পাশে,খাঁটের পায়ার ধারে হাত দাও'..
মেয়েটা পায়া'র ধারে হাত দিতেই হাতে শক্ত মতো কিছু বাঁধল। সেটা দিয়ে সজোরে যুবক'টির গলার ধারে আঘাত করলো।
জানালা'র শিঁক দিয়ে বানানো পুরোনো কিন্তু ধাঁরালো চাকু'টা যুবক'টিকে মুহূর্তের মধ্যে প্রানহীন করে দিল। তার গলা রক্তে লাল হয়ে উঠতেই মেয়েটা উপরের দেহ'টাকে ঠেলে সরিয়ে ঘরের চারিদিকে তাঁকাল। কোথাও কেউ নেই। একপাশে শূন্য খাঁট,,মরচে ধরা জানালা,দূরে কোথাও একটা খাতার মতো পড়ে আছে।
এই সময় কন্ঠ'টা আবার প্রতিধ্বনিত হল.....'পালাও'.............'পালাও'........'পালাও'..
মেয়েটা ভয়ে কুকরে আছে। দু'টো চোখে জোর করে পড়ানো কাজল উপচে জল নেমে সারা মুখ কালো কালো হয়ে উঠেছে। সে জানেনা এটাই তার শেষ সুযোগ। সে জানেনা তার পালানোর মধ্যে দিয়েই এই অপরাহ্ন'এ আরও একজনের মুক্তি ঘটতে চলেছে।
(শেষ)

1 comment: