Saturday 20 June 2015

পুস্তক পর্যালোচনা~ সোহম দাস:-

সোহম দাসের পুস্তক পর্যালোচনাঃ-
নাম : কিশোর রচনাসংগ্রহ
লেখক : মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রকাশকঃ আনন্দ পাবলিশার্স
পরিসংখ্যানবিদ ও অর্থনীতিবিদ মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৌহিত্র । রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের লেখকদের মধ্যে অন্যতম মোহনলাল কিশোর-সাহিত্যে তাঁর মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিলেন নিপুণভাবে । তাঁর কিশোর-কাহিনীগুলি শুধু কিশোর নয়, যুবা, প্রবীণদেরও যে মন ভালো করে দেবে সেটা এই বইটি একবার পড়লেই বোঝা যাবে । “বোর্ডিং স্কুল” ও “বাবুইয়ের অ্যাডভেঞ্চার” উপন্যাস দুটি এক কথায় অসাধারণ । দুটি উপন্যাসেরই নায়ক দুটি কিশোর । তাদের চোখ দিয়ে দেখানো তাদের খুদে জগতটাকে তিনি যেভাবে দেখিয়েছেন, তাতে লেখক হিসেবে তিনি কতখানি দক্ষ তার পরিচয় তিনি দিয়েছেন । “বোর্ডিং স্কুল”-এর নবাগত ছাত্রটি অন্যান্য ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে যেমন পরিহাসের পাত্র হয়ে ওঠে তেমন অনেকেই তাকে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে কাছে টেনে নেয় । কিন্তু অদৃষ্টের নিষ্ঠুর পরিহাসে সেইসব আপনজনেরা তাকে ছেড়ে চলে যায় কোনও না কোনও ভাবে । ভালো-খারাপের দোলাচলে অতিবাহিত হতে থাকে তার স্কুলজীবন । পড়লে পাঠকের চোখে জল আসতে বাধ্য । “বাবুইয়ের অ্যাডভেঞ্চার” আবার অনেকটাই অন্যরকম । বলা যেতে পারে, অনেকটাই অনুপ্রেরণামূলক । কিশোর বাবুই “আজবতত্ত্ব” নামের এক কিশোর-পত্রিকায় দেশ বিদেশের নানা অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী পড়ে উদ্বুদ্ধ হত এবং সে নিজেই তার মত করে অ্যাডভেঞ্চারে বেড়িয়ে পড়ত । সেগুলি পড়লে হয়তো পাগলামো মনে হবে কিন্তু এটাই তো কৈশোর । এই পাগলামো না থাকলে আর কৈশোরের মজা কোথায় । কিন্তু বাবুই পরবর্তীকালে সত্যি সত্যিই এক দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চার করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের হয়ে । যুদ্ধবিমান চালিয়ে সে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করত । তারপর অবশ্য ধরা পড়ে যায় । তারপর যুদ্ধ শেষ হলে সে একজন মুক্ত ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরের এক দ্বীপে ব্যবসা শুরু করে ও শেষে দেশে ফিরে আসে । তাও সে তার ছেলেবেলার সেই দিনগুলো ভুলতে পারে না । আজবতত্ত্ব কোলে নিয়ে ছাদের কোণে বসে পড়ে বিভোর হয়ে যাওয়ার দিনগুলো । এছাড়া এই সংকলনে ২৯টি নানা স্বাদের গল্প, ১৭টি মজার গল্প, দুটি নাটিকা, ৪টি বড়গল্প, ২টি ভূতের গল্প, ১৪টি রূপকথা, স্মৃতিকথা ইত্যাদি স্থান পেয়েছে । রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখা স্মৃতিকথা “কত্তাবাবা” আর লেখক-শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে “বড় দাদামশাইয়ের কথা” ঠাকুরবাড়ির শিল্প-সংস্কৃতির কথা যেমন বলে তেমন পারস্পরিক হৃদ্যতার কথাও সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন তাছাড়া উঠে এসেছে নানা অজানা তথ্যও । যতই ভারী ভারী গম্ভীর বই পড়ি না কেন, মাঝে মাঝে স্বাদ বদলের জন্য এরকম বইয়ের খুব প্রয়োজন আছে, একেবারে মন ভালো করে দেওয়া বই । তাই কিনতেই পারেন আনন্দ পাবলিশার্সের এই অনবদ্য সংকলন । দাম মাত্র ১৭৫ টাকা ।

No comments:

Post a Comment